আশরাফ চৌধুরী : [২] সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) গণধর্ষণ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে দুই নিরাপত্তা কর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো কলেজ কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রেখেছে। এ ঘটনায় আলোচনা-সমলোচনা হচ্ছে।
[৩] অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিনের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েকটি ব্লক দখল করে রেখেছিল ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এর আগে ২০১২ সালেও তিনি ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালে অন্য ছাত্রদের কক্ষ থেকে তাড়াতে গিয়ে ছাত্রাবাসটি পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তখনকার সময়েও ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিনের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
[৪] এ বিষয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, ছাত্রাবাসের বিস্তারিত বিষয় জানার জন্যই ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তিনি এই ছাত্রাবাসের অনেক পুরাতন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক। তার অনেক বিষয় জানা রয়েছে। অতীতে কী হয়েছে আর বর্তমানে কীভাবে কী ঘটনা ঘটেছে তা জানার জন্য তাকে রাখা হয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো কারণ নেই।
[৫] এক সূত্র জানায়, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলোতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে অবস্থান করেছেন ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান। তার দখলে থাকা ওই বাংলো থেকেই পুলিশ শুক্রবার রাতে একটি পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার জিআই পাইপ উদ্ধার করে।
[৬] এ ঘটনায় শাহপরাণ থানার এসআই মিল্টন সরকার বাদি হয়ে সাইফুরকে একমাত্র আসামি করে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন।
[৭] করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে এমসি কলেজ বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস খোলা ছিল। ছাত্রাবাসে শুধু সাইফুর নয় ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক জামাল উদ্দিনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছাত্রাবাসে অবৈধভাবে থাকতেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। সাইফুর রহমান কলেজের নিয়মিত ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছাত্রাবাসের অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কর্মীরা নানা ধরনের উৎপাত করলেও ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক একেবারেই নীরব ছিলেন।
[৮] ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তাঁর সামনে স্ত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় শনিবার রাতে তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের গনিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় কলেজের ছাত্রাবাসের একজন নিরাপত্তারক্ষী ও প্রধান ফটকের একজন নিরাপত্তারক্ষীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা হলেন রাসেল মিয়া ও সবুজ আহমদ। এরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরি ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমান মাসুমের ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
[৯] এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সালেহ আহমদ এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত কমিটিকে ৭দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। গণিত বিভাগের একজন অধ্যাপককে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিতে দুই হলের দুজন সুপারকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে কেবল মাহফুজুর রহমান মাসুম আমাদের নিয়মিত ছাত্র ও ছাত্রাবাসে থাকে। তাই এই শিক্ষার্থীর ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :