জেরিন আহমেদ: [২] ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের সাম্প্রতিক এক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এতে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ এবং ভারতীয় শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সাহায্য করে। পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
[৩] কিছুদিন আগে বিএসএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী জড়িত। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের ওপর দোষ চাপিয়েছিল।
[৪] এদিকে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাম্প্রতিক তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে খোদ বিএসএফ এবং দেশটির শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সহায়তা করে। এ ঘটনায় এক বিএসএফ জওয়ানসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)-এর দুর্নীতি দমন শাখা তাদের আটক করে।
[৫] ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থা বলছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী- বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতা-কলমে দেখাতে হয় মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কতসংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তার পরে। মালদা, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়।
[৬] মালদা, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতা কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ, খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনে নেয়, তারা মূলত পাচারকারী। নিলাম এমনভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছায়।
[৭] প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেওয়া হয় গরু প্রতি দুই হাজার রুপি। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেওয়া হয় ৫০০ রুপি। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পাড়ে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।
[৮] দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদা-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই সূত্র। দিন কয়েক আগে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই অফিসাররা তল্লাশি চালিয়েছে। ভিন রাজ্যেও কয়েকটি জায়গায় রেড করা হয়েছে। এফআইআর করা হয়েছে বিএসএফ-এর এক অফিসার এবং বেশ কিছু গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসারের নাম সতীশ কুমার। তিনি বিএসএফ-এর ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তার সল্টলেকের বাড়ি সিল করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভিন রাজ্যে তার আরও বাড়ি আছে।
[৯] সিবিআইয়ের সূত্র বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় অন্তত ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।
[১০] এর আগেও বিএসএফের এক কর্মকর্তাকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তার কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায়। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরও কয়েক কর্মকর্তা সিবিআইয়ের নজরে আছে।
[১১] সম্প্রতি এনআইএ এবং সিবিআইয়ের সূত্রগুলো জানায়, গরু পাচারের সঙ্গে আরও ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। গরু পাচারকারীরা অস্ত্র পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবির সঙ্গে জড়িত বলেও কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে রাজি হননি সিবিআই কর্মকর্তারা। জাগো নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :