শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:৫০ সকাল
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অবশেষে পদ ছাড়ছেন বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস!

ডেস্ক রিপোর্ট: অবশেষে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) মহাসচিব পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। অনেকটা ক্ষোভ ও অভিমান থেকে তিনি পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও এর আগে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। তখন তিনি পদ ধরে রাখার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে ছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের কেন্দ্রীয় অফিসে খাস কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস জানান তিনি পদত্যাগ করবেন।

উপস্থিত সদস্যদের কেউ কেউ সেখানেই তাকে পদত্যাগ করতে বললে তিনি জানান আগামী ৩ অক্টোবর বেফাকের আমেলা বৈঠকে তিনি পদত্যাগ করবেন। খাস কমিটির বৈঠকে তার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত নিয়েও কথা হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা আবদুল কুদ্দুস তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে বলেন, আমার শাইখ ও মুর্শিদ (আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.) নেই, আমি আর কোনো পদে থাকবো না, আমাকে কেউ আর কোথাও রাখতে পারবে না। তবে তিনি পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও কেউ তাকে পদে বহাল থাকার অনুরোধ করেননি বলে সূত্রে জানা গেছে।

মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বেফাকের মরহুম সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কয়েক মাস আগে ফাঁস হওয়া বেফাকের বহিষ্কৃত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফের সঙ্গে তার ফোনালাপে কিছু অনিয়মের বিষয় প্রকাশ পায়। তখন থেকেই তার পদত্যাগের দাবি জোরালো হতে থাকে। তবে হাটহাজারী হুজুরকে দিয়ে তিনি নিজের নামে ‘সাফাইপত্র’ আনান। পরবর্তী সময়ে হাটহাজারীতে বেফাকের খাস কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটিও হয়। যদিও সেই কমিটির রিপোর্ট এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে বেফাকে তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতরা কিছুটা বেকায়দায় আছেন। তাদের ব্যাপারে নানা মহলের ক্ষোভ রয়েছে। এজন্য তারা এখন কিছুটা ব্যাকফুটে থাকতে চান।

২০১৬ সালের বেফাকের দীর্ঘ সময়ের মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদীর ইন্তেকালের পর প্রথমে ভারপ্রাপ্ত পরে কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। তার সময়ের মৌলিক অর্জন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি। স্বীকৃতি ঘিরেই ঘটিত হয় কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইয়াতুল উলইয়া। কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে আয়োজন করা হয় শুকরানা মাহফিলের। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই সভায় বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসের বক্তৃতার কিছু অংশ নিয়ে প্রচণ্ড আপত্তি আছে আলেম ও শিক্ষার্থীদের। সেই বক্তৃায় তিনি দায়িত্বশীল ও নেতাসুলভ আচরণ করতে পারেননি বলে মনে করেন অনেকে। তখনই সমালোচনার দানা বাঁধে তার বিরুদ্ধে।

স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে বিশেষ ভূমিকা রাখা আল্লামা আশরাফ আলী ছিলেন বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি এবং হাইয়াতুল উলইয়ার প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি ইন্তেকাল করলে শূন্য হয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ- বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি ও আল হায়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান। পদ দুটির জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি কিংবা আগ্রহ থাকলেও বিশেষ ক্ষমতা বলে পদ দখল করেন মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস।

একসঙ্গে তিন পদ (মহাসচিব, সিনিয়র সহসভাপতি, কো-চেয়ারম্যান) দখল করায় বেফাকের দায়িত্বশীলদের মধ্যে অনেকেই তার প্রতি ক্ষুব্ধ। হাটহাজারী হুজুরের একান্ত লোক হিসেবে তিনি অনেকটা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন। তবে সম্প্রতি কিছু ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর চরম বেকায়দায় পড়ে যান মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ও তার সহযোগীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা নানা বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেন। এতে অনেকটা কাজও হয়েছিল। তবে হঠাৎ করে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিদায়ে এবং হাটহাজারী মাদরাসায় ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে তারা চরম বেকায়দায় পড়ে যান। এজন্য এবার তারা পদ ছেড়ে আপাতত টিকে থাকার কৌশল অবলম্বন করছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র : আওয়ার ইসলাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়