শাহীন চৌধুরী: [২] বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে দুর্গম এলাকাগুলোতে এ ব্যবহার বেশি কারণ ওইসব এলাকায় কখনো জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ পৌছাবে না। বিকল্প হিসেবে জনগণ একলালীন টাকা বিনিয়োগ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করছে। আবার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই কাজের ঋণ প্রদান করছে। সেক্ষেত্রে যাদের অর্থিক সামর্থ কম তারাও সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশে এখন হো সোলার ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
[৩] সূত্রমতে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে দেশে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা (সোলার হোম সিস্টেম) চালু হয়। যাত্রার প্রথম এক দশকে সারা দেশে সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন লাখ। ২০০৮ সালে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নের পর পরবর্তী এক দশকে সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ লাখেরও বেশি। মূলত কর অব্যাহতিসহ সরকারের নীতি প্রণোদনায় সোলার হোম সিস্টেমের দাম যেমন কমেছে, তেমনি সহজলভ্যও হয়েছে তা। এক দশকের ব্যবধানে পাল্টে গেছে জাতীয় গ্রিডবঞ্চিত দেশের প্রত্যন্ত ও পল্লী অঞ্চলের চিত্র। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব মানুষের নাগালে এসেছে সৌরবিদ্যুৎ। উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা এখন তিন কোটির ঘরে উন্নীত হয়েছে।
[৪] প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজটি শুরু করেছিল গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শক্তি। তবে সারা দেশে কর্মস‚চিটি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দরকার ছিল একটি সরকারি উদ্যোগ। বিশ্বব্যাংক ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (জিইএফ) অনুদানে ২০০৩ সালে দেশে সোলার হোম সিস্টেম কর্মসূচি শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইডকল। পরবর্তী সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, জিআইজেড, কেএফডব্লিউ, আইডিবি, ইউএসএআইডি ও ডিএফআইডির মতো প্রতিষ্ঠানও ইডকলের সোলার হোম কর্মসূচিতে অর্থায়ন করে।
[৫] বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিপাল বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশে ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। সারা বিশ্বে এটা উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এখন এই মডেল অনুসরণ করা হয়। তবে এর বাইরেও সৌরবিদ্যুতের সুযোগ রয়েছে। সেচকাজে এখন বাংলাদেশে ১৩ লাখ ডিজেলচালিত পাম্প ব্যবহার হয়। এর মধ্যে দুই লাখ পাম্প সৌরবিদ্যুতে চালানো সম্ভব।
[৬] সারাদেশে ৬৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মাঠ পর্যায়ে সোলার হোম সিস্টেম কর্মস‚চি বাস্তবায়ন করছে ইডকল। ক্রেতা তৈরি, সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের পাশাপাশি বিক্রয়োত্তর সেবাও দেয় এসব প্রতিষ্ঠান। ইডকল সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। কর্মস‚চির মাধ্যমে গত ১০ বছরে সারা দেশে প্রায় ৩৭ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করেছে ইডকল। প্রতিষ্ঠানটির ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশে ৬০ লাখ ইউনিট সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের লক্ষ্য রয়েছে।
[৭] সূত্রমতে, এক দশক আগে ২০ ওয়াট ক্ষমতার একটি সোলার হোম সিস্টেমের দাম ছিল ২০ হাজার টাকার ওপরে, যা দিয়ে তিনটি বাতি ও একটি মোবাইল চার্জার চালানো সম্ভব হতো। বর্তমানে ৬-৭ হাজার টাকায় এর চেয়ে বেশি ক্ষমতার সোলার হোম সিস্টেম পাওয়া যায়, যা দিয়ে লাইট, চার্জারের পাশাপাশি ফ্যান ও টেলিভিশনও চালানো সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে সোলার সিস্টেমের দাম যেমন কমেছে, তেমনি দেশে সোলার সিস্টেমের দাম কমাতে ভ‚মিকা রেখেছে যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর মওকুফ সুবিধা। দাম কমে যাওয়ায় ছোট পরিসরে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের জন্য গ্রাহকদের তেমন ঋণেরও দরকার পড়ছে না।
[৮] ২০০৮ সালের আগে সারা দেশে সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা ছিল তিন লাখের কম। এরপর নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। সৌরবিদ্যুতের জন্য আমদানি করা যন্ত্রাংশে কর মওকুফ করা হয়। ইডকলের মাধ্যমে ক্রেতাদের সহজ শর্তে অধিকতর ঋণ ও ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থাও করা হয়। এসব নীতির সুফল পাওয়া যায় পরের পাঁচ বছরেই। ২০১৪ সালেই দেশে সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং ২০১৯ সালে ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে আসে দেশের প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে থাকা দেড় কোটির বেশি মানুষ।
বিদ্যুৎ, ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে সারা দেশে স্থাপন হওয়া সোলার হোম সিস্টেমের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বদলে গেছে প্রান্তিক এলাকার তিন কোটি মানুষের জীবন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে মানুষের ব্যাপক আগ্রহও খাতটিকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে স্রেডা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, দেশে সোলার হোম সিস্টেমের ব্যাপক বিস্তৃতির জন্য মোটা দাগে চারটি বিষয় গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা রাখছে ¯্রডো। এগুলো হচ্ছে, সহজ ঋণ সুবিধা, কারিগরি সহযোগিতা, বিক্রয়োত্তর সেবা ও উদ্ভাবনী বিক্রয় পদ্ধতি।