তপন মাহমুদ লিমন: একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগরে দোষ দিয়ে লাভ নেই, দলমত নির্বিশেষে সবাই ভারতের উপর মনস্তাত্বিকভাবে নির্ভরশীল। এর প্রমাণ আপনি পাবেন পেঁয়াজের দাম বাড়লে। কারণ বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়লে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই ভারতকে গালি দেওয়া শুরু করে। যারা গালি দেবার সাহস পায় না, তারা স্যাটায়ার করে। সবার কথায় মনে হয়, ভারতের পেঁয়াজ আমাদের অধিকার, এটা না দেওয়া দোষের। এই সুযোগটা কাজে লাগায় ভারত এবং একইভাবে আমাদের অসৎ ব্যবসায়ীরা। মাত্র রপ্তানি বন্ধ করলো, দাম ৫০ থেকে ১০০। কীভাবে? কোনো মজুদ ছিলো না? আর আজকে যে পেঁয়াজ আমি বাজার থেকে ১০০ টাকায় কিনলাম, তা বিক্রেতা কবে কিনলো? দেশি পেয়াঁজের দাম ডাবল হবে কোন যুক্তিতে?
ভারতের উপর এই নির্ভরশীলতার ফল মারাত্মক। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির উপর এই মনস্তাত্বিক নির্ভরশীলতা খুব প্রভাব ফেলে। ভারতের প্রতি নতজানু সরকার এটাকে কাজে লাগায়। কীভাবে? কারণ এই মনস্তাত্বিক ধারণা থেকেই জনমনে এই ধারণাই বিশ^াসে পরিণত হয়েছে যে, ভারত ছাড়া অনেক বিষয়ে আমাদের চলবে না। তাই ভারতের সাথে আপোস করে চলাই ভালো। বড় ভাই বলে কথা। কিন্তু বাণিজ্য যে একটা পারস্পরিক সম্পর্ক, তা আমরা মনেই করি না। আর পেঁয়াজ শুধুু ভারতে হয় না, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশ এটি রপ্তানি করে। চীন, তুরস্ক বা পাকিস্তানের পেঁয়াজ আমরা আগেরবার খেয়েছি। তো, খুব সাধারণ কথা হলো, পেঁয়াজ বাণিজ্যকে নতুনভাবে ভাবতে হবে বাংলাদেশকে। একক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনত হবে। একসময় ভারতীয় গরুর কোনো বিকল্প ছিলো না। এটা যতোটা না বাস্তব ছিলো, তার চেয়ে বেশি ছিলো মনস্তাত্বিক। কিন্তু গরুর মাংসে এখন বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পন্ন। তার মানে ভাবনায় বদল জরুরি। মনে রাখবেন আপনার আমার সোকলড ট্রোল বা হাসিঠাট্টার একটা ঐতিহাসিক কারণ আছে। আমরা ভাবি, একটু মজাই তো করছি। কিন্তু আমরা তাই প্রকাশ করি যা আসলে আমরা বিশ^াস করি। কিন্তু মানুষের বিশ^াস একদিনে তৈরি হয় না। এর অনেক পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ আছে। এক কথায় বললে, আমাদের ভারত সমালোচনা আসলে ভারত নির্ভরশীলতারই আরেক রূপ। ফেসবুক থেকে