এস,এম রিয়াজ: [২] পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় রসালো মালটা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন জাকির হোসেন ও আবু হোসেন। তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুড়ে গেছে।
[৩] সরেজমিনে গিয়ে দেখে তাদের মালটা বাগানদুটো যেন সবুজের হাতছানি। তাদের খামারে মালটার ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। ঝুলে আছে অসংখ্য মালটা। বিষ মুক্ত (রাসায়নিক সার মুক্ত) এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ভাণ্ডারিয়াও পাশ্ববতী জেলায় এই মালটার কদরও বাড়ছে। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই মালটা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
[৪] খুলনা ও ঢাকা থেকে পাইকার এসে মাল্টা ক্রয় করছেন। মাল্টার পাশাপাশি তাদের খামারে কলা, আদা, হলুদ, করল্লা, ঢেরশ বিভিন্ন সবজি থাকলেও বেশি লাভবান হচ্ছেন মালটা চাষে।
[৫] জানা যায়, ২০১৭ সালে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ী ইউনিয়নের আতরখালী গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার হাওলাদারের ছেলে মোঃ জাকির হোসেন ১০ একর জমির ৩শত বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ রোপন করে প্রর্দশনী বাগান শুর করে ছিলেন। বর্তমানে তার খামানের রয়েছে ৭শত মাল্টা গাছ। পাশা পাশি আদা, হলুদ, পুঁইশাক, করল্লা, ঢেরশ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন তিনি জানান, মাল্টা চাষে লাভ বেশী।
[৬] কৃষক জাকিরআরও জানান, বেকার অবস্থায় বিদেশ যাওয়ার জন্য মনোনিবেশ করেছিলাম কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ার কারনে বিদেশ যাত্রা বাতিল হয়। প্রথমে কলা চাষ শুরু করি কিন্তু বন্যার কারনে লোকসানেরসম্মুখীন হই। পরবর্তীতে এলাকার একজন শিক্ষকের পরামর্শে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হই।
[৭] প্রথম বছরে ইতি মধ্যে ১০০ মন মাল্টা ঢাকায় পাইকারী বাজার বাদামতলী আড়তদার মো. ইদ্রিস মিয়ার এর কাছে বিক্রি করেছি। এই বাগানের মাল্টা স্বাদে খুব মিষ্টি ও আকারে বড় হওয়ার কারনে আবারো তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন বাগানের সব মাল্টার অগ্রিম বায়না করতে।
[৮] জাকির হোসেন আরো জানান, এই বাগান তৈরীতে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। প্রথমবার বিক্রি হয় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মাল্টা আরো ৪শ মন মাল্টা বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশা করেন। যার বাজার মূল্য ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।
[৯] এদিকে তার চাচাতো ভাই আবু হোসেন ২ একর জমির উপরে তার মালটা বাগান করেন। এই বাগানে বারি মালটা-১ প্রজাতির ৩শটি গাছ রোপন করেন। তার খামারেও প্রচুর পরিমানে মাল্টা ধরেছে। খুলনার ‘ভাই ভাই ফল ভাণ্ডারের’ মালিক (পাইকার) মো. রুহুল আমিন তার খামারে মাল্টা কিনতে এসেছেন।ওই আবু হোসেনের কাছ থেকে ৫০ মন মাল্টা ক্রয় করেন তিনি।
[১০] পাইকার রুহুল আমিন জানান, এই মালটা রাসায়নিক, কেমিক্যাল ও ফরমালিনমুক্ত রসালো। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় খুচরা ক্রেতারা খুবই আগ্রহের সঙ্গে মাল্টা ক্রয় করেন। তবে আমদানি করা মালটার চেয়ে দামেও কম। সে এ মাল্টা ৮০- ৯০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে খুলনায় ১শ ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। সেখানে এই মল্টার অনেক চাহিদা রয়েছে খামারী যত খুশি তাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন।আবু হোসেন জানান, তার মাল্টার খামার তৈরীতে একলক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর তিনি ৩ লক্ষাধিক টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন বলে তিনি জানান।
[১১] তাদের দেখাদেখি স্থানীয় শিক্ষক হারুন অর-রশিদ সহ অনেক বেকার যুবক এই মাল্টা চাষে আগ্রহী । আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই এক বছরের মধ্যে পুরো গ্রাম মাল্টা গ্রামে পরিনত হবে। তাদের অনুসরণ করে যারা মালটা চাষ করছে তাদের পরামর্শ এবং চারা দিয়ে সহযোগিতা দিচ্ছেন এই দুই কৃষক।
[১২] উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল আলম নবীন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, মো. আবদুল্লাহ-আল-মামুন মাল্টা বাগান পরির্দশনে যান। বাগানে ঝুলে থাকা মাল্টা দেখে অভিভূত হন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বস্ত করেন তারা। সম্পাদনা: সাদেক আলী