শারফিন শাহ্: দুপুর হলেই কলাভবনের ঘুম ভেঙে যেতো। ক্ষুধাতুর ক্লান্ত প্রাণগুলো দুরন্ত মানসে ছুটতো ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি চত্বর কিংবা হাকিম চত্বরের আকাশছোঁয়া রেস্তোরাঁয়, ধন্যি ছেলেমেয়েরা আইবিএ ক্যান্টিন আর পকেট ফাঁকা আটপৌরেদের উদ্বিগ্ন উচ্চারণ-‘ওই তাড়াতাড়ি চল, হলের খাবার শেষ হয়ে যাবে তো, পরে গেলে উচ্ছিষ্ট ছাড়া আর কিছু পাবি না।’
আমরা যেতাম কোথায়? প্রিয় ছিল ‘আইইআর আর আইবিএ ক্যান্টিন’-৫০ টাকায় পরিচ্ছন্ন আহার। -মিমু, আমি, বিজন, প্রীতি, মেহেদী, তিথি, বাবুই দলবেঁধে কতবারই না দুপুর ভোজনে সজীব হয়েছি এই দুই খাবার মহলে। তারপর ক্ষণিকের মুক্তসভা শেষে আবার ক্লাসরুমে ছুট- স্যার আসবেন আসবেন করে কেটে যায় বেলা আর আমার কখনো ক্লাস ফেলেই চলতে হয় উপার্জনের পানে। গভীর রাতে হলে ফিরেই দুটো দানাপানি মুখে পুরে পড়তে পড়তেই আবার ঘুমে ডুব দেওয়া।
কী এক জীবন ছিল। ওই খাওয়া, ওই ঘুম, ওই আনন্দ এখন অধরা। বন্ধুতাবিচ্ছিন্ন, খরাগ্রস্ত, আর যান্ত্রিক স্তরে পৌঁছে গেছি যে। এককাপ অফিসিয়াল ঘুম তাড়ানিয়া কফি হাতে পেছনে তাকালেই ভেসে ওঠে-মানুষ কীভাবে বদলে যায়, মানুষের জীবন কীভাবে সংকীর্ণ হয়, কীভাবে মানুষ সীমাবদ্ধ হয়, কীভাবে বন্ধন টুটে যায়।
আমিই আমার বদলে যাওয়া দেখে বিস্মিত হই আর ভাবি- হোক না এমন। এভাবে কতো কিছুই তো আসবে যাবে। তাই বলে জীবন নিয়ে বসে থাকার কী প্রয়োজন? তবু মনে লাগেÑপ্রতিদিনই তো সূর্য একই নিয়মে ওঠে আবার অস্ত যায়, তারাদেরও তো একই জীবনযাপন, বৃক্ষরাও তো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সগর্বে স্থির। মানুষ কেন পারে না আমৃত্যু একদেশদর্শী হতে। বদলে যাওয়ার নামই কি মানুষ? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :