সুজন কৈরী : [২] আমেরিকান নারী সেনা অফিসার, সুন্দরী নারীর ফেইক ফেসবুক আইডি ও হোয়াট্স এ্যাপ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার উপহার দেয়ার নামে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাতকারী চক্রের ১৫ জন নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তাদের কাছ থেকে প্রতারনায় ব্যবহৃত ৯টি ল্যাপটপ, ২২টি মোবাইল ও ৫টি হিসাবের ডায়েরী উদ্ধার করা হয়েছে।
[৩] শুক্রবার মালিবাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, কৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা আমেরিকান নারী সেনা অফিসার, সুন্দরী নারীর ফেইক ফেসবুক আইডি ও হোয়াট্স এ্যাপ ব্যবহার করে আসামীগন বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ বা মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত আকর্ষনীয় ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করে।
[৪] পরবর্তীতে মেসেজের মাধ্যমে বলে, সে ইয়েমেন বা আফগানিস্থান বা সিরিয়াতে আছে এবং তার কাছে কয়েক মিলিয়ন ডলার রয়েছে, কিন্তু ওই দেশে যুদ্ধ চলমান থাকায় যে কোনো সময় মূল্যবান সম্পদ নষ্ট হতে পারে তাই নতুন বন্ধুকে উক্ত ডলার বা মুল্যবান সম্পদ গিফট্ করতে চায়। যদি সে বেঁচে থাকে, তাহলে পরে তা ফেরৎ নিবে। এমন প্রলোভন দিয়ে প্রথমে বন্ধুদের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর নেয় এবং ওই ঠিকানায় বন্ধুদের মেসেঞ্জারে বা হোয়াট্স এ্যাপে গিফট প্যাকেটের ছবি পাঠায়। পরে মেসেজে যে কোনো একটি এয়ারলাইন্সে গিফট্ প্যাকেটটি বুকিং দেয়ার রিসিট পাঠায়। ঠিক দুই দিন পর বন্ধুর (ভিকটিমদের) মোবাইলে ফোন করে ভিডিও কলে এয়ারপোর্ট কাষ্টমস অফিসে থাকা গিফট প্যাকেট দেখায় এবং কাষ্টমসের ভ্যাট বাবদ বিভিন্ন ধাপে টাকা নিতে থাকে। এভাবে ফরহাদ হোসেন তালুকদার নাওমর একজন ভিকটিম বিভিন্ন একাউন্টে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে জানতে পেরে আর টাকা না পাঠিয়ে সিআইডিকে জানান।
[৫] রেজাউল হায়াদার বলেন, চক্রটি আবার টাকা চেয়ে ফোন করার পর অভিযান চালিয়ে তাদের হাতনাতে কাষ্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দারীকারী মোবাইল, ল্যাপটপসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় বিপুল পরিমান আলামত জব্দ করা হয়েছে।
[৬] সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত আমারা যে তথ্য পেয়েছি, এতে দেখা যায় চক্রটি ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে গিফট্ দেয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের সহযোগী ও ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয় হল এরা একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র, তাদের সহযোগীরা উল্লেখিত প্রত্যেকটি দেশে অবস্থান করছে। আমরা গত জুলাই ৩ জন, ২১ জুলাই ১৩ জনকে এবং এই ১৫ জনকে একই প্রক্রিয়ায় অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করেছি। কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনায় প্রতারনার টাকা গ্রহনে ব্যবহৃত একটা বা একাধীক ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারের নাম মিলে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশ বিভিন্ন স্থানে থাকলেও মূলত একই সংঘবদ্ধ একটি চক্র তারা।
[৭] গ্রেপ্তার ১৫ নাইজেরিয়াওনর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্লবী থানায় ভুক্তভোগী ফরহাদ হোসেন বাদি হয়ে মামলা করেছেন।