লী কুড়িগ্রাম : আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, স্কুল ছুটির পর একঘণ্টা ইংরেজি পড়াতেন হরেকৃষ্ণ স্যার। স্যার ঞবহংব, ঠড়রপব, ধৎঃরপষব এগুলো পড়াতেন। আমরা কয়েকজন গ্রুপ করে বসতাম। স্যার একটু দূরে বসে ননস্টপ সিগারেট টানতেন। আমাদের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্ক স্যারের। একদিন স্যারকে খাতাটা দেখতে বলছি আমি, স্যার চোখ বন্ধ করে সিগারেটের শেষ সুখটান দিচ্ছিলেন। আমি স্যারকে বললাম, স্যার, সিগারেট খান কেন? তিনি খাতায় কলম চালাতে চালাতে বললেন, ভালো লাগে। আমি তো নাছোড়বান্দা টাইপের। বললাম, স্যার, খুব মজা? তিনি মাথা নীচু করেই বললেন, হুম। এবার আর যান কই? স্যারের পকেট থেকে প্রায় জোর করে একটা সিগারেট ও ম্যাচ নিয়েছি আমি। অন্য বন্ধুরা হাসছে। স্যার, না না, করছে। এমন করিস না। মাথায় ধরবে। লোকে দেখবে। আমাকে আটকায় কে? আমি স্যারের স্টাইলেই সিগারেট ঠোঁটে চেপে ম্যাচ জ্বালিয়ে দিয়েছি টান। আর কি হলো জানিনা। কাশতে কাশতে চোখে ধোয়া বেরিয়ে গেছে। যখন স্বাভাবিক হলাম, দেখি, স্যার রাগে গরগর করছেন। জ্বলন্ত সিগারেট স্যারের ফিনফিনা শাদা পাঞ্জাবীতে পড়ে এপার-ওপার হয়ে গেছে।
স্যার, তারপর থেকে আর আমাদের সামনে বসে সিগারেট টানতেন না। আর কর্মজীবনে বলি, শিক্ষা জীবনে পুরুষ সহযোগীরা কখনও দূরে গিয়ে সিগারেট টানেনি। বরং এতো কাছে বসে টেনে গেছে আমি নিজেকে পরোক্ষ ধুমপায়ী বলতাম। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে বন্ধুরা মাঝে মাঝে বলতো, এতো যে পরোক্ষ ধুমপায়ী বলিস, একটা টেনে দেখাও তো। দুই- চার বার যে ঠিকঠাক প্রমাণ দিইনি তাও নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিটি নারী-পুরুষ মনে করে সিগারেট, মদ, গাঞ্জা এসব পুরুষদের খাবার। শতভাগের কাছাকাছি পুরুষ তার জীবনে কখনও না কখনও এগুলোর স্বাদ নেয়। তাতে কোন পুরুষ চরিত্রহীন হয় না। সমাজ মনে করে মারামারি, চুরি, ঘুষ, খুন, গুম এগুলোও পুরুষের কাজ। পুরুষ নির্যাতক হবে, পুরুষ ব্যাভিচারি করবে, পুরুষ পেটাবে, বউ তালাক দেবে। নারীরা এগুলোর কোনো একটা করলে ঢিঢি পড়ে যায়। জাত গেলো জাত গেলো টাইপের।
সমাজের চাহিদা বিবেচনা করে এগুলোর ডিমান্ড তৈরি করে পুলিশও। যখনই কোনো নারী মার্ডার হয়, পুলিশ কোনো না কোনোভাবে তার মাঝে প্রেম পরকীয়া খুঁজে পায়। একইভাবে যখন কোনো পুরুষ মার্ডার হয় তখনও তার পেছনের কোন নারীকে খুঁজে বের করে আনে। পাবলিকের পছন্দের খাবার। তাই আর বিচার বিবেচনার দরকার পড়ে না। গোগ্রাসে গিলে ফলে। জাবর কাটে পাড়ায় মহল্লায়। শিপ্রার পক্ষে আছি। ফেসবুক থেকে