আরিফুজ্জামান তুহিন: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত দেশে রাজনীতির প্রধান নিয়ামক ছিল সমাজতন্ত্র। সরকারি দল বাকশালে যারা ছিলো সেই আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এবং জাতীয় লীগ (আতাউর রহমান খান) মূল স্লোগান ছিলো সমাজতন্ত্র। যতোই সমালোচনা হোকÑ বাকশাল তো সমাজতন্ত্র কায়েমের কর্মসূচি। এখন এই সমাজতন্ত্র প্রকৃত না ভিন্ন কিছু সেটা অন্য মূল্যায়ন। কিন্তু জনগণকে সমাজতন্ত্রের কথা বলেই বাকশাল করা হয়েছিল। আবার আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল জাসদও সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য সংগ্রাম করছিল। এ ধারাগুলো মূলত আওয়ামী লীগের রাজনীতির মধ্যেকার বিদ্যমান দ্বন্দ্ব সংঘাত হিসেবে দেখছি। এর বাইরে মওলানা ভাসানীর দল সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম করছিল। আবদুল হক সাহেবের ইপিসিপি এমএল বন্দুক দিয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য লড়ছিল। সশস্ত্র সংগ্রামের এ সারিতে ছিলো সর্বহারা পার্টি, পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাদি।
অর্থাৎ সরকারি ও বিরোধী দল সবাই তখন সমাজতন্ত্র চাচ্ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ সমাজতন্ত্রের এ রাজনীতিকে পছন্দ করেছেন। তারা সরকারি ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে আশা করেছিল সমাজতন্ত্র কায়েম হবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। সমাজতন্ত্রের তীব্র জনপ্রিয়তার জায়গায় নিয়েছে ‘ইসলামি রিপাবলিক’। পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসেছে পৌঁছেছে আজ কমিউনিস্টরা যে একটা বিপ্লব করতে চান সেই কথা তাদের বহু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে হয়। অর্থাৎ সমাজের শেকড় থেকে কমিউনিজমের চিন্তাকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। শেখ মুজিব ভালো নাকি খারাপ সেই আলাপ এখানে অবান্তর। একটা সমাজ থেকে প্রগতিশীল একটা চিন্তা এভাবে যারা উধাও করে দিতে পেরেছে তারাই শেখ মুজিবের হত্যাকারী ও এ হত্যার বেনিফিশিয়ারি। কোথাও কমিউনিস্ট বিপ্লবের জন্য সেই মাটির প্রস্তুতি দরকার হয়। বাংলায় এই মাটি বহুদিন ধরে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট হত্যার মধ্য দিয়ে তাকে সমূলে উৎপাটন করা হয়েছে। কমরেড রুশপন্থী ও কমরেড চীনপন্থী মাঠে এখন আমরা আর কেউ নেই। এখন মাঠ দখল করেছে ইসলামপন্থীরা। আওয়ামী লীগ তার আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে পুরোপুরি বাজার ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে টিকে আছে। ফলে আরও নিবিড়ভাবে ১৫ আগস্ট হত্যার কারণ ও ফলাফল বামপন্থীদের পর্যালোচনা করা দরকার। ফেসবুক থেকে