শিরোনাম
◈ নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয়: কেন ক্ষুব্ধ মোদি সমর্থকেরা? আল–জাজিরার প্রতিবেদন ◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা

প্রকাশিত : ১১ আগস্ট, ২০২০, ১০:০৪ দুপুর
আপডেট : ১১ আগস্ট, ২০২০, ১০:০৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইফতেখায়রুল ইসলাম : পুলিশ ছাড়া বাকি সকলেই কি সাধু,বা দরবেশ বাবা?

ইফতেখায়রুল ইসলাম : আপন ভাইয়ের সম্পদ ও সম্পত্তি মেরে দেওয়া ভাইটিও দিন শেষে একটি আদর্শ সমাজ চায়! নিজ পিতার অবৈধ উপার্জনে অর্জিত অর্থে লেখাপড়া করা ছাত্রটি, বাবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালেও সব দিক দিয়ে সুন্দর একটি বাংলাদেশ চায়!

এক হাত জায়গা নিয়ে মারামারি করা উত্তেজিত মহাশয়গণ দেশে আইনের প্রয়োগ ও বিচার পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে না বলে বিষোদগার করে! থানা অথবা আদালতে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়া তথাকথিত সৎ মানুষও সমাজে এত কোন্দল পছন্দই করেন না!

নিজ বাসায় ছেলের বউয়ের উপর নির্যাতন করা শ্বশুর-শাশুড়ি বাইরে গেলে নারী নির্যাতন একদমই পছন্দ করেন না! হোয়াইট কালার ক্রাইম করে প্রতি বছর সন্তানদের বিলাসবহুল জীবন দিয়ে অনেকেই বলেন এদেশ ঠিক আমাদের সাথে যায় না!
অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিশাল বাড়ি নির্মাণ করে বিশেষ পেশাজীবীগণ হাতে তজবি নিয়ে দেশটা রসাতলে গেল বলে কষ্ট পান!

ক্ষুদ্র থেকে ধরে বৃহৎ ব্যবসায় কতিপয় ব্যবসায়ী বিভিন্ন অসৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ব্যবসার দ্বার উন্মোচন করে এবং এই দেশ মন্দ বলে চিৎকার করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন! পবিত্র রমজান মাসে তাদের পাপকর্ম আকাশ ছুঁয়ে ফেললেও তারা নিজেদের সঠিক বলেই দাবি করেন!

প্রতি মাসে বিভিন্ন থানায় হাজারে হাজারে মামলা রুজু হয়। যেখানে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, রাহাজানি, প্রতারণা, দস্যুতা, খুন, নারী নির্যাতনসহ নানা ধরণের মামলা রুজু হয়! এখানে হয় বাদী নয়তো বিবাদী অপরাধী! মাঝখান থেকে তৃতীয় পক্ষ এত মামলার দেশে সভ্য মানুষ বাস করে না বলেও দাবি করেন!

বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন জন নিজের কাজে সততা, স্বচ্ছতা বজায় না রেখেও নিজেকে পীর বলে দাবি করতে পিছপা হোন না, কারণ তাদের অপরাধ তো আবার দৃশ্যমান নয়! তাই বিনা হিসেবে ফেরেশতার তকমা পেয়ে যান।

মজার বিষয়টা হলো এদের প্রত্যেকের অপরাধ ব্যক্তির অপরাধ হলেও শুধু একটি 'সব সময়ের মাথা ব্যথা সৃষ্টিকারী' পেশার একজনের দায়, তাদের সকলকে বহন করতে হয়!

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার স্বীকৃতিও বহুবছর পর মেলে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায়!

তারপর আসলো করোনা যুদ্ধ! নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে অপ্রিয় পেশার এই লোকজন হাজারে, হাজারে আক্রান্ত হন এবং জীবন দান করেন! মানবতার খাতিরে যে কাজ নিজের নয় সেই কাজও করেন! আর যাদের কাজ, তারা ঘরে আরাম কেদারায় অথবা বিছানায় শুয়ে, বসে বলতে থাকেন "আমরা ঘরে আছি, আপনারাও ঘরে থাকুন"। এবং দিনশেষে তারা খুব ভাল মানুষ হিসেবেই পরিগণিত!

এই দুর্যোগে অনেকেই নিজের বাবা, মা, ভাই ও বোনের লাশ ফেলে দিয়ে পালিয়েছেন, অসুস্থ অবস্থায় ফেলে গেছেন নিজের স্বজনকে, তারা নিজেদের নীচুতা না দেখে, হঠাৎ অকুণ্ঠ প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অপ্রিয় পেশার মানুষদের! বড্ড অদ্ভুত এই ভালবাসা! করোনাকালীন এই পেশার অভিভাবকের আহ্বানে সবাই এক যোগে কাজ করেছেন, তাই সবাইকে নিয়ে প্রশংসা করা হয়েছে! আবার গুটিকয়েকের অপরাধে সবাইকে দায়ী করা হয়েছে! আপনাদের পেশার কারো একজনের দায় যদি আপনাদের সকলের না হয়, এই বিশেষ পেশার দায় তাদের সকলের হবে কেন? পোশাক দেখা যায় বলে? তাহলে পোশাক ছাড়া অপরাধ কি অপরাধ নয়? আমার বিচ্যুতি নিয়ে বলেন, সমস্যা নেই, সকলকে দায় কেন দেবেন?

তাহলে কি পোশাকধারী এই পেশা ছাড়া আপনারা সকলে সাধু, দরবেশের বেশেই আবির্ভূত হয়েছেন?

ছেলেবেলায় পড়েছি পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করুন! আমি বলছি শুধু পাপ নয়, পাপীকেও ঘৃণা করুন! মাথায় রাখুন পেশা কখনো খারাপ হয় না, পেশাজীবীরা খারাপ হোন! আপনাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখুন, আপনারা সবাই ঠিক আছেন কিনা? যদি না থেকে থাকেন, তাহলে উপরোক্ত বর্ণনা অনুসারে, বিভিন্ন পেশায় আপনাদের চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবে সেটিও মাথায় রাখুন!

প্রলোভন ছাড়া পেশায় থেকেও আপনাদের অনেকেই অপরাধের সীমা ছাড়িয়ে ফেলেন! আর অন্যদিকে একটি পেশায় হাজারো প্রলোভন থাকার পরও হাজারে হাজারে অফিসার দিনের পর দিন সততার সাথে নিজেদের যুদ্ধ চালিয়ে যান! আপনার তুলনামূলক সহজ যুদ্ধের তুলনায় যে কঠিন যুদ্ধ তাঁরা চালান, দয়া করে তাঁদের মনোবল ভেঙে দিয়েন না!

যে কোনো অপরাধীর চূড়ান্ত শাস্তি আমরাও চাই! আপনার ভাইয়ের অপরাধের শাস্তি যেমন আপনি পান না, ঠিক তেমনি একজনের অপরাধের দায় অন্যকে দিয়েন না! তা করলে এটি আপনার দ্বিমুখী চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলবে! এই সমাজের দ্বৈত চরিত্রের মানুষের জন্য কবির ভাষায় বলতে চাই,

আমরা সবাই পাপী;
আপন পাপের
বাটখারা দিয়ে;
অন্যের পাপ মাপি!

লেখক : অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, পল্লবী জোন গোয়েন্দা বিভাগ (ডিএমপি)।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়