শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা

প্রকাশিত : ০২ আগস্ট, ২০২০, ১২:৩৭ দুপুর
আপডেট : ০২ আগস্ট, ২০২০, ১২:৩৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাবলু ভট্টাচার্য্য: জন্মদিনে স্মরণ, গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য

বাবলু ভট্টাচার্য্য:  জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় সবাইকে। কীট-পতঙ্গ যে প্রতিদিন লড়াই করে বেঁচে থাকে, এ দেশে তা প্রথম দেখেছিলেন বিজ্ঞানী গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য। সবাই তাঁকে বলেন প্রকৃতি বিজ্ঞানী।

তাঁর গায়ে সোঁদা মাটির গন্ধ। কবিগান গেয়ে বেড়িয়েছেন, লোকগীতি গেয়েছেন। ভাটিয়ালির সুর তুলেছেন, গ্রামের কৃষক, শ্রমিকের জন্য গান লিখেছেন। এরই সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার বনে-জঙ্গলে। কীট-পতঙ্গ সংগ্রহ করেছেন। খালি চোখেই তাঁর দেখার ক্ষমতা ছিল আশ্চর্য।

প্রজাপতি, পিঁপড়ে, মাকড়সা, মাছ, ব্যাঙাচি- এসব নিয়ে তাঁর গবেষণা। পিঁপড়েরও কত নাম। বিষ পিঁপড়ে, কাঠ পিঁপড়ে, লাল পিঁপড়ে, সুড়সুড়ে পিঁপড়ে, ডেঁয়ো পিঁপড়ে, নালসো পিঁপড়ে, ক্ষুদে পিঁপড়ে- এদের স্বভাব হল লড়াই করে বেঁচে থাকা। যুদ্ধ করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। যুদ্ধ জয় করে এরা আনন্দে নাচে।

যুদ্ধে জেতার প্রবণতা ক্ষুদে পিঁপড়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ক্ষুদে পিঁপড়ের দল মাটি দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে। তারপর উই পোকার মতো মাটির নিচ দিয়ে গর্ত করে সুড়ঙ্গ বানায়। তারপর ছক কষে কিভাবে শত্রুকে বিনাশ করতে হবে। আর এই লড়াই তারা করে কেবলমাত্র খাবারের জন্য। তারা মূলত লড়াই করে বড় লাল পিঁপড়েদের সঙ্গে।

গোপাল চন্দ্র বলছেন, ক্ষুদেদের কাছে প্রায়ই হেরে যায় বড়রা। আরও আশ্চর্য হল যে, যুদ্ধে জিতে পরাজিত কিছু পিঁপড়কে তারা কয়েদ করে নিয়ে আসে। ছোটদের বাসায় ক্রীতদাস হিসাবে থাকে। শ্রমিকদের গোলাম হয়ে থাকে আজীবন।

গোপাল চন্দ্রের আগে থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তে কীট-পতঙ্গ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। বিজ্ঞানী ওয়সন, উইয়সন, গুডল গোয়ৎস বহু তথ্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু গোপালচন্দ্র যে দৃষ্টিতে দেখেছিলেন তা অনেকের কাছে ঈর্ষার কারণ। তাঁর গবেষণা থেকে অনেকে অনেক তথ্য নিয়েছেন। কেউ ঋণ স্বীকার করেছেন, কেউ করেননি। তবে তা নিয়ে তিনি কোনদিনই ক্ষোভ জানাননি।

মাকড়সা নিয়ে তাঁর গবেষণায় মুগ্ধ বিদেশের বিজ্ঞানীরা। মাকড়সা নিয়ে তাঁর গবেষণা দেখতে এসেছিলেন বেলজিয়ামের এক বিজ্ঞানী। মিলনের পর স্ত্রী মাকড়সা পুরুষ মাকড়সাকে খেয়ে ফেলে। মিলনের পর পালাতে যায় পুরুষ আর তখনই তাকে দৌড়ে ধরে ফেলে স্ত্রী। তারপর মেরে গিলে নেয়। গোপাল এই দৃশ্য দেখিয়েছিলেন বেলজিয়ামের বিজ্ঞানীকে, তিনি তো দেখে 'থ'।

তার বাবা অম্বিকাচরণ ভট্টাচার্য একজন গ্রাম্য পুরোহিত ও মাতা শশীমুখী দেবী একজন গৃহবধু ছিলেন। গোপালচন্দ্রের পাঁচ বছর বয়সে অম্বিকাচরণ মৃত্যুবরণ করলে দারিদ্র্যে মধ্যে তার শৈশব অতিবাহিত হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করার পর গোপালচন্দ্র যখন ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে কলেজে আই.এ. পড়ার জন্য ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে তার পাঠ্যক্রম শেষ করা হয়ে ওঠেনি। এরপর তিনি একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং পালা গান ও জরি গানে ইত্যাদি লোকগীতির জন্য গান রচনা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন হাতে লেখা পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করতেন।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে গোপালচন্দ্র সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেন। পুলিন বিহারী দাসের সঙ্গে তিনি অক্লান্ত ভাবে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের কর্মকাণ্ডে শ্রম দেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জ্ঞান ও বিজ্ঞান নামক বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি 'ভারতকোষ' নামক বাংলা ভাষার একটি বিশ্বকোষ রচনাতেও সহযোগিতা করেন।

গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে 'বাংলার কীট পতঙ্গ' নামক গ্রন্থ রচনার জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি.এসসি. ডিগ্রী প্রদান করে।২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে অবদানের জন্য 'গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরস্কার' প্রচলন করেন।

১৯৮১ সালের ৮ এপ্রিল গোপালচন্দ্র কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৮৯৫ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়