কামরুল হাসান মামুন: এই বছর ইতিমধ্যেই আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আল্লাহ মালিক কাজেমী, কামাল লোহানী, কবি আশরাফ সিদ্দিকীসহ আরো অনেকেই। এইটা কেবল অর্ধবার্ষিকী রিপোর্ট এবং তাও পূর্ণাঙ্গ না।
প্রশ্ন হলো এই মাপের মানুষ কি বর্তমান বাংলাদেশে তৈরী হচ্ছে? আমরা এখন যাদেরকে বড় ভাবি তাদের অধিকাংশইতো হয় চোর না হয় বাটপার কিংবা লুটেরা। মহিউদ্দিন খান আলমগীর। যিনি প্রভাবশালী আমলা ও মন্ত্রী ছিলেন এবং আওয়ামীলীগের নেতা। দুইদিন আগে জানলাম তার মালিকানায় একখানা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ আছে যার কোন বৈধতাই কখনো ছিল না। তার একখানা ব্যাংক ছিল যা জন্মের পরপরই জন্মদাতারাই লুটে নিয়ে দেউলিয়া বানিয়ে ফেলেন। এর পরের প্রজন্মতো ইদানিং পত্রপত্রিকাতেই দেখছি।
একটি দেশ কিভাবে আগাবে যদি আগের প্রজন্মের মানুষ থেকে পরের প্রজন্মের মানুষরা আরো বড় না হয়? হবে কিভাবে? আমি আমার ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে বর্তমান শিক্ষকতা জীবন পর্যন্ত বাংলাদেশে অনেক ডাকসাইটে ছাত্র দেখেছি। কিন্তু এই দেশে যেহেতু মেধার মূল্যায়ন হয় না, মেধা বিকাশের পরিবেশ নাই তাই দিন যত গিয়েছে তাদের ধার কমতে দেখেছি। খোদ বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখেছি। হবে না কেন? ধার ততদিনই থাকে এবং আরো শানিত হয় যদি নতুন জ্ঞান শেখা, সৃষ্টি ও বিতরণের মধ্যে থাকি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এইগুলোর ধারেকাছেও নেই। অথচ পরিবেশ এমন হওয়া উচিত একসময় যাদের মেধা নেই ভেবেছি তারাও মেধাবী হওয়ার সুযোগ পায়।
কোন গবেষণা যদি নেচার অথবা সাইন্স জার্নালে প্রকাশিত হয় আর সেটি যদি দেশের কোন একটি জার্নালে প্রকাশিত কোন আর্টিকেলের সমান মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলে এই দেশে কেন ভালো গবেষণা হবে? যদি ১২ থেকে ১৫টি আর্টিকেল প্রকাশিত হইলে অধ্যাপক হয়ে যাওয়া যায় তাহলে কেন কেউ ৩০ বা ৫০ বা ১০০টি আর্টিকেল প্রকাশ করবে? একটি গরিবানা থ্রেশহোল্ড সংখ্যার বেশি কে কত ভালো গবেষণা করল তার কোন মূল্যায়ন এই দেশে হয় না। অর্থাৎ যারা প্রশাসনে আছে তারা এই দিকে নজরই দেয় না। কারণ দিলেইতো তারা নাঙ্গা হয়ে যাবে। এইজন্যই ভালো একাডেমিক মানুষদের প্রশাসনে নিয়োগ দিতে হয় যাতে সে ভালোদের মূল্যায়ন করতে ঈর্ষাবোধ না করে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :