সুজন কৈরী : [২] রাজধানীর গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড নেগেটিভ লোকজনকে পজিটিভ বলে ভর্তি রেখে অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদও শেষ হয়েছে এক বছর আগে। এসব নানা অভিযোগে হাসপাতালটি সিলগালার করা হবে।
[৩] রোববার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম বলেন, গত বছরের জুন মাসে হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর লাইসেন্স নবায়ন করেনি।
[৪] সারোয়ার আলম বলেন, সরকারের অনুমোদন পাওয়ার আগে থেকেই এই হাসপাতালটি কোভিড-টেস্ট করছিল। টেস্টের জন্য হাসপাতালটি অনুমোদন পেলেও এখানে আর্টিফিশিয়াল মেশিন না থাকায় অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিছু কিছু টেস্ট তারা ডিভাইসের মাধ্যমেও করেছে। এর জন্য রোগীদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে। এছাড়াও অনেক টেস্ট না করেই রোগীদের কাছ থেকে বিল করেছে। তারা এখানে কোভিড নেগেটিভ রোগীদের পজেটিভ রিপোর্ট দিয়ে হাসপাতালের আইসিউতে এবং কেবিনে ভর্তি করে বিল বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
[৫] কয়েকজন রোগী থাকায় রাতে হাসপাতালটি সিলগালা করা যায়নি। রোগীদের চিকিৎসা নিরবচ্ছিন্ন করতে এবং তাদের যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেদিক বিবেচনা করে হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়নি। রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্থানান্তর হওয়ার পর সিলগালা করা হবে।
[৬] সারোয়ার আলম বলেন, অভিযানকালে দেখা গেছে একজন রোগী এখনও ভর্তি আছেন। আগের দিন করোনা পজেটিভ দেখিয়ে ভর্তি করে পরের দিন তার নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু তাকে একদিন ভর্তি রেখে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। আমরা হাসপাতালের বেশ কিছু বিলের কপি জব্দ করে দেখেছি, ২৪ জুন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং ২৫ জুন ওই রোগীর রিলিজ হয়েছে। কিন্তু একদিনে তার বিল করা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার টাকা। মজার বিষয় হচ্ছে, ওই রোগীর একই টেস্ট বিলে তিনবার দেখানো হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালটিতে যেসব রোগী আছেন তাদের মধ্যে কারা কোভিড পজেটিভ আর কারা নেগেটিভ তা নিশ্চিত নয়। কারণ হাসপাতালটি ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করছে।
[৭] অভিযানে হাসপাতাল থেকে অসংখ্য অননুমোদিত কিট উদ্ধার করা হয়েছে। এসব কিট কীভাবে আনা হয়েছে তার কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অ্যান্টিবডি টেস্টের কোনো অনুমোদন না থাকলেও তারা কিট দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে অ্যান্টিবডি টেস্ট করেছে।
[৮] তাদের অপারেশন থিয়েটারে আমরা বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী পেয়েছি। এছাড়াও তাদের ল্যাবে রোগীদের সেম্পল সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই রোগীদের নেগেটিভ পজিটিভ রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এগুলো রোগীদের বিল করার জন্য করেছে। হাসপাতালের মেডিসিন স্টোরে কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে। যা বিক্রি বা মজুদ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমন নানা অভিযোগের কারণে হাসপাতালের সহকারী পরিচালককে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও অননুমোদিত ওষুধ মজুদের দায়ে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
[৯] হাসপাতালের মালিক ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে জানিয়ে র্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমরা মনে করি এসব অপরাধ খুব মারাত্মক এবং গুরুতর অন্যায়। এজন্য তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অপরাধীদের দুই বছরের বেশি শাস্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
[১০] র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. আশিক বিল্লাহ বলেন, সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। সেখানে কোভিড পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়াসহ বিভিন্ন গুরুতর অনিয়ের অভিযোগে র্যাব বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ম-কানুন না মেনে হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এই হাসপাতালে করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :