করোনাকালের দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ ব্যস্ত থাকছে স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহ দুর্নীতির নানা এপিসোড নিয়ে। মাঝে মাঝে জাতি প্রি-ম্যাচুউরড বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে উজ্জীবিত হয়েছে, মন খারাপ করেছে, পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, দিন শেষে বিজ্ঞান সাংবাদিকতার নামে রাজনৈতিক ভাষ্য হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফ্যাক্ট নয় আমরা আবেগে ভাসতে চাই, ঠকতে পছন্দ করি আবার যেচে ঠকে এসে কখনো বুদ্ধিজীবি কখনো দেশপ্রেমিকের অভিনয় করি। "বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ" এর বিপরীতে আবেগের তোড়ে আমরা বেগটাকে থামিয়ে দেই। ভারী ভারী টেকনিক্যাল শব্দ চয়নে তাজ্জব বনে গিয়ে দেশপ্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকি, ফ্যাক্ট আর সম্ভাব্যতা নিয়ে ভাবি না বরং বিজ্ঞান চর্চার স্বাভাবিক নিয়মে ফ্যাক্ট নিয়ে যারা ভাবে তাঁদের দেশপ্রেমটাকে কটাক্ষ করি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাতে জানা যায় ভ্যাক্সিন নিয়ে বিশ্বব্যাপী দেড় ডজন প্রোজেক্ট অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছেন। প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে আছে অসংখ্য। শ’খানেক সক্রিয় প্রোজেক্টের মধ্যে এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানব ট্রায়ালের খবরাখবর এবং এর অগ্রগতি। যারা প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন ধাপ পর্যন্ত আসতে পারেননি অর্থাৎ একেবারেই প্রাথমিক স্তরে আছেন, বিভিন্ন স্তরে নিজেদের কারিগরি আর আর্থিক সক্ষমতা, লজিস্টিক আর ঝুঁকির হিসেব না করেই ভ্যাক্সিন আবিস্কারের ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন, মাস ছয়েকের মধ্যে ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনের আশাবাদের কথা বলে চলেছেন, তাঁদের জন্যে শুভকামনা। সময়ই বলে দিবে এই ধরণের আগাম ঘোষণা কতোটা বাস্তবতা ভিত্তিক আন্তরিক গবেষণাধর্মী আর কতোটা জেনেশুনেই রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক আর মিডিয়ায় প্রচারণা সর্বস্ব চমক।
করোনা টেস্টের সংখ্যা কমছে, কারণ ফী সহ নানামুখী অব্যবস্থাপনা। কিন্তু টেস্ট বনাম করোনা পজিটিভের হার কিন্তু উরধ্মুখী, কখনো কখনো হয়ে যাচ্ছে ২৫%। এই অবস্থায় নিজেদের বুজুর্গপনা দেখাতে বলে দিচ্ছি আমরা পিক থেকে নেমে যাচ্ছি, এই তো আর কয়দিন, করোনা চলে যাবে। এই কথা বলছি তথ্য উপাত্ত ছাড়াই। এই একই কাজ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন ভয়াবহ বিপদে, দিনে কখনো কখনো ষাট হাজার কোভিড রোগী গুনতে হচ্ছে। প্রি-ম্যাচুউরড পূর্বাভাস স্বাস্থ্যখাতের জরুরী ব্যবস্থাপনার জন্যে ভীষণ বিপদজনক। আশাবাদেও দায়িত্বশীলতা জরুরী। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় সংক্রমণ ০.১%, এই হিসেব আমলে না নিয়ে ৫০ গুন বেশী ধরলেও ৫% হয়। বাংলাদেশে যারা হার্ড ইমিউনিটি’র কথা বলছেন, উনারা ভ্যাক্সিন ছাড়া শুধু ভাইরাস দিয়ে সংক্রমণকে ন্যুনতম ৭০% নিয়ে যাওয়ার পরিনতির কথা ভাবেন কি করে?
সর্বগ্রাসী ধান্ধাবাজি প্রমাণ করছে আমরা কতোটা পিশাচ হতে পারি, নিজেদের লোভের জন্যে কোভিড টেস্টের নামে জনগণের বিরুদ্ধে কতোটা মানবতাবিরোধী হতে পারি। রিজেন্ট শাহেদ আর ডাঃ সাবরিনা আমাদের সমাজের এরকম অসংখ্য মন-মানসিকতার দুটো ধরা খাওয়া উদাহরণ মাত্র। ডাটা এবং তথ্য উপাত্তের গবেষণা আর বিজ্ঞান বাদ দিয়ে পীর আওলিয়া সন্ন্যাসী ধাঁচের ভবিষ্যৎবাণী করছেন আজকাল অনেক গবেষক। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিও রেহাই পাচ্ছেনা এই বদ খাসিয়ত থেকে। ফেসবুক থেকে।