শিরোনাম
◈ তিন মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদিকে বাড়ি ছাড়তে হবে: হাইকোর্ট  ◈ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেতে জনগণকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: বিএনপি ◈ সরকারের ফাঁদে পা দেইনি, দল ছাড়িনি, ভোটেও যাইনি: মেজর হাফিজ ◈ আমার একটাই চাওয়া স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ জিম্মি জাহাজ উদ্ধারে অভিযান নয়, আলোচনা চায় মালিকপক্ষ ◈ বিএনপিকে আমরা কেন ভাঙতে যাবো, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের  ◈ হলমার্ক মামলায় তানভীর-জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন ◈ ভোরে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ২০ ◈ রাখাইনে আরো একটি শহর দখল করেছে আরাকান আর্মি ◈ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির অভিযোগ, দেশে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজউক

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২০, ০৬:৪৭ সকাল
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২০, ০৬:৪৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে

ডেস্ক রিপোর্ট : [২] করোনাভাইরাস ইস্যুতে চীন থেকে সরে যাওয়া বিদেশি বিনিয়োগের কিছু অংশ যাতে বাংলাদেশে আসে, সে লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে চীন থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ পাওয়ার আশায় রয়েছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব কারণে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে।

এদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন নীতিমালা সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার (এফসি) অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশের কোনও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা কোনও বিদেশি বিনিয়োগকারী তার লভ্যাংশের অর্থ এফসি অ্যাকাউন্টে রাখতে পারবেন। যেকোনও সময় অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ নিজ দেশে বা অন্য দেশে নিয়ে যেতে পারবেন। আবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে লভ্যাংশের অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগও করতে পারবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নানা উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই শিথিলতা এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার (৭ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

[৩] যদিও এর আগে একই বিষয়ে নানা ধরনের বিধিনিষেধ ছিল। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। বিশেষ করে চীনা বিনিয়োগ বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনে দাপট আরও বাড়বে। কারণ, সারা পৃথিবীর মধ্যে সম্পদশালী দেশ এখন চীন। এছাড়া, সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগও চীনেরই। ফলে করোনা ইস্যুতে চীন থেকে কেউ তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিলেও চীনের অর্থনীতিতে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়বে।’

[৪] তিনি উল্লেখ করেন, অন্যান্য নতুন দেশ শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার দেখে এই দেশে বিনিয়োগ বাড়াবে না। কিন্তু চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে লভ্যাংশের অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগও করতে পারবে। তিনি মনে করেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অনেক কিছু সহজ করতে হবে। যেমন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এখানে বিনামূল্যে জমি দেওয়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কমাতে হবে। রাস্তাঘাট ভালো করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে তিনটি দেশের দিকে নজর দিতে হবে। এই দেশ তিনটি হলো— প্রথমত চীন, এছাড়া জাপান ও কোরিয়া।’

[৫] প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব এখন সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে দেশটি। ফলে এই মুহূর্তে চীনই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র।

এখন পর্যন্ত চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এসেছে (স্টক বিনিয়োগ) ২ হাজার ৯০৭ মিলিয়ন ডলার। শুধু ২০১৯ সালে চীন থেকে নতুন বিনিয়োগ এসেছে এক হাজার ৪০৮ মিলিয়ন ডলার।

[৬] সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ৩৬০ কোটি ডলার। এরমধ্যে চীনই করেছে বেশি। গত বছর চীনের পর নেদারল্যান্ড ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র। দেশটি এখানে বিনিয়োগ করেছে ৬৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। ৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থান চতুর্থ। যদিও একসময় যুক্তরাষ্ট্রই ছিল শীর্ষে। ২০১৮ সালে ১৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে চতুর্থ স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৯৯৫ সালে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। এরপরই নরওয়ের টেলিনর ও মিসরের ওরাশকমের মতো টেলিকম জায়ান্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

জানা গেছে, মহামারি করোনার সংক্রমণ শুরুর পর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ১০ শতাংশ কমেছে। চীন থেকে সরতে চাওয়া বিদেশিদের আকর্ষণের জন্য ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ নানা রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশও সেটা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

[৭] এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খুরশিদ ওয়াহাব বলেন, ‘চীন থেকে সরে যাওয়া বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গত ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে তাদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছিল।’

সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এফসি অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন মোহাম্মদ খুরশিদ ওয়াহাব। তিনি উল্লেখ করেন, এতদিন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের লভ্যাংশের অর্থ তাদের নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারতেন। এখন এফসি অ্যাকাউন্ট খুলে ওই অ্যাকাউন্টে লভ্যাংশের অর্থ রাখতে পারবেন। আবার যখন খুশি বিনিয়োগকারীরা তার লভ্যাংশের অর্থ বাংলাদেশে যেকোনও প্রতিষ্ঠানে পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবেন।

[৮] আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ‍তুলছে সরকার। এছাড়া বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি একটি খসড়া তৈরি করেছে।

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এই আইনে আর কী কী পরিবর্তন আনা দরকার, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুততম সময়ে আইনটি পাস করার ওপর জোর দেওয়া হয় চিঠিতে। বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে বিদ্যমান আইনগত, নীতিগত এবং পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

[৯] এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিভিন্ন খাতে সব মিলিয়ে ৩৭২ কোটি ৮০ লাখ ডলার এফডিআই বা সরাসরি বিনিয়োগ এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম।

[১০] পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে আমদানি হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। একই সময়ে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় আমদানিকারক দেশ ভারত থেকে ৭ হাজার ৬৪৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ ভারতের চেয়ে চীন থেকে প্রায় দ্বিগুণ পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়া চীনে পণ্য রফতানি হয়েছে ৭৪৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের। এদিকে বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে সম্প্রতি চীন বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চীনের বাজারে আরও ৫ হাজার ১৬১ পণ্যের ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ এ সুবিধা পাচ্ছে। আর এটি বলবৎ থাকবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। অবশ্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চীন থেকে এপিটির আওতায় ৩ হাজার ৯৫টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছিল। ওই সুবিধার বাইরে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হলো। এতে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় চীনের বাজারে বাংলাদেশের ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় এসেছে।

সরকারি তথ্য বলছে, এত কিছুর পরও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ১২ হাজার ৮৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।বাংলা ট্রিবিউন,যুগান্তর,প্রিয়ডটকম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়