ডেস্ক রিপোর্ট : [২] সাভারের বিরুলিয়ার আলফা ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন ২৫ বছর বয়সি সুজন কালিন্দী। রিকশাভ্যানে করে বিভিন্ন দোকানে পানির জার ডেলিভারি দিতেন। দিন দশেক আগে সুজন করোনার উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। রাজধানীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর-১০নম্বর সেকশনের এ ব্লকে ৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির মেসে থাকতেন তিনি।
[৩] রোববার রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে আলফা ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরির মালিক সাইফুল ইসলামের কাছে খবর দেয়া হলে তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেন সুজনকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য। রাত ১ টার দিকে সুজনকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পথে গড়িতে মৃত্যু হয়। এরপর লাশসহ অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।
[৪] রাতেই ফ্যাক্টরির মালিক মোবাইল ফোনে ছেলের মৃত্যুর খবর দেন সুজনের বাবার কাছে। লাশ সৎকারের জন্য ঢাকায় আসতে বলেন। চা বাগানের শ্রমিক সুজনের বাবা বকুল কালিন্দী জানান, তারা লাশ নিবেন না। লাশ দেখতে ঢাকায়ও যাবেন না। আর করোনার এই সময়ে লাশ ঢাকা থেকে আনতে অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ। এই টাকা তারা কোথায় পাবেন? তাই সুজনের বাবা বলে দিলেন, ছেলের লাশ আপনারা যা খুশি তাই করেন।
[৫] চিন্তায় পড়েন সাইফুল ইসলাম। সকালে তিনি চলে এলেন হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। হাসপাতালের মৃত্যু সনদে লেখা ছিল মো. সুজন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সুজনের এই নাম দেখে কেউই লাশের সৎকার করতে চায় না। প্রত্যেকেই বলে দেয় যে মৃত্যু সনদ সংশোধন না হলে তারা এই লাশ সৎকার করতে পারবে না। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট থেকে সুজনের প্রকৃত নাম সুজন কালন্দী দিয়ে মৃত্যু সনদ বের করেন সাইফুল। পুলিশের কাছে খবর দেন। কারণ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ছাড়া লাশ সৎকার করা যাবে না।
[৬] পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, সুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পুলিশের একটি টিম তার ভাড়া মেসে গিয়ে সন্ধান চালায়। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে বিষয়টি জানানো হয়। এভাবে এসব কাজ করতে সোমবার বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে।
[৭] ততক্ষণে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে লাশ সৎকার করা একটি টিম চলে আসে। তারা লাশের গায়ে জীবাণুনাশক তরল ছিটিয়ে দেয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সটি রওনা দেয় পোস্তগোলা শশ্মানঘাটের দিকে।