রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: [২] একদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আতঙ্ক অন্যদিকে অভাব ও বাসা ভাড়ার ভোগান্তিতে রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে নিজ গ্রামের দিকে পাড়ি দিচ্ছে শিক্ষার্থী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার।
[৩] কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাঙ্গামাটিতে যখন কঠোর নিরাপত্তা অবস্থানে জেলা প্রশাসন ঠিক সে সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে শত শত শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্ত পরিবার। গ্রামের বাড়ি গেলে অন্তত ঘর ভাড়া লাগবে না। তারই উদ্দেশ্য জীবন বাঁচানোর তাগিদে শহর থেকে গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছে শিক্ষার্থী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার। সামান্য আয়ের থেকে ব্যয়ের হিসাবটা বেশি।
[৪] সরকারের দেওয়া একবারের ত্রাণ দিয়ে পরিবার কতদিন বা চলবে। পেটের ক্ষুধা মানে না প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার আত্মসম্মান বোধে কারো কাছ থেকে চাইতে পারে নি কোনো ত্রাণ সামগ্রী। যদিও বা প্রশাসন ও পৌরসভার কর্তপক্ষ বলছে, রাঙ্গামাটির কোনো পরিবার নেই যা ত্রাণ সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
[৫] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাজেক, লংগদু, নানিয়ারচর,বিলাইছড়িসহ অন্য জেলা খাগড়াছড়ি লক্ষীছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া কয়েক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কোভিড-১৯ সারা দেশের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। একদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আতঙ্ক অন্যদিকে প্রতিমাসে বাড়িওয়ালাদের হাজার হাজার টাকা দেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠে। কোভিড-১৯ প্রভাবে বাবা-মা প্রতিমাসে খরচ পাঠাতে পারেন না। যার কারণে প্রতিমাসে ঘড় ভাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে জিনিসপত্র নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পাড়ি জমাচ্ছেন।
[৬] রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে লংগদুর নিজ গ্রামে চলে গেছেন এমন এক পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে , তিনি পেশায় একজন সিএনজি( অটোরিক্সা) চালক। পরিবারে ৮ মাসের এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে শহরের কল্যাণপুরে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। তাঁর সাংসারিক খচর বাদেও গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের জন্য খচর দিতে হতো। কিন্তু রাঙ্গামাটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলে সিএনজি চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। একদিকে বাড়িওয়ালার বাসা ভাড়া, অন্যদিকে প্রতিমাসে বাবা-মাকে সাংসারিক খরচ পাঠানোসহ প্রতি মাসে লাগে ২০-৩০ হাজার টাকা লাগে। কোভিড-১৯ রাঙ্গামাটিতে ছড়িয়ে পড়লে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে অভাব আর কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়ে রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি লংগদুতে চলে যান তিনি।
[৭] পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, রাঙ্গামাটিতে ছাত্র-ছাত্রী শুরু করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত গরীব পরিবারসহ যারা অন্য জেলা থেকে শহরে ভাড়া বাসাতে থাকে তাদের সবাইকে ত্রাণের আওয়াতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যারা ত্রাণ সামগী পায়নি তাদেরকে কাউন্সিলরদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাড়িওয়ালারা যদি মানবিক হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি ভাড়া না নেয় তাহলে পৌরসভা পুরো একবছরের পৌর কর নিবে না।
[৮] রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবার কিংবা কোনো শিক্ষার্থী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে এই ধরনের কোনো তথ্য প্রশাসনকে কেউ অবগত করেন নি। তবে রাঙ্গামাটিতে সবাইকে ত্রাণের আওয়াতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে শহরের কেউ বাদ পড়েনি। যারা পায়নি এমন কেউ থাকলে তারা যোগাযোগ করলে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হবে।
সম্পাদনা: সারোয়ার জাহান
আপনার মতামত লিখুন :