শাহানুজ্জামান টিটু : [২] ৩ বছর মেয়াদী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আগামী অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার তিন দিন আগে বিএনপি বাজেট ভাবনা প্রকাশ করেছে।
[৩] এতে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষাসহ বিবিধখাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তরার নিজ বাসভবন থেকে ভার্চূয়্যাল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ।
[৪] দফাগুলো হলো :
১. জরুরি ভিত্তিতে নগদ সহায়তা প্রদান, তৈরি খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বিতরণ, ছিন্নমূলদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা, গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখি শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প, SME খাত, কৃষি খাত, খাদ্য সংগ্রহ এবং প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সহায়তা সাপোর্ট প্রদান, স্বাস্থ্য খাতের জরুরী উন্নয়ন ও অপ্রত্যাশিত খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে ৮৭ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ আগামী বাজেট প্রণয়নের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। ২. সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
৩. মন্দকালীন বিনিয়োগ, ভোগ ব্যয় ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামষ্টিক চাহিদা বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে সর্বাধিক জোর দিতে হবে।
৪.অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
৫. কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬.কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কৃষি ও গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ আয়-রোজগার বাড়াতে হবে। সহজ শর্তে ব্যাপকভাবে কৃষি, পোল্ট্রি ও লাইভস্টক ঋণ প্রদান।
৭. তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাতে সহায়তা অব্যহত রাখা। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে বিকল্প বাজার খোঁজা।
৮. বাজারে নগদ অর্থ-প্রবাহ নিশ্চিত করতে সক্রিয় মুদ্রানীতি গ্রহণ। মুদ্রানীতিকে স্থিতিশীলকরণ ও উন্নয়নমুখী - দুটো দায়িত্ব পালন করা। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অভিভাবকের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। প্রয়োজনে Conventionalপদ্ধতির বাইরে গিয়ে হলেও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানামুখী সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯. লক্ষ্য ও খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার কর্মসূচী গ্রহণ এবং জোর দিতে হবে দারিদ্র ও বৈষম্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর।
১০. সঙ্কটকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ (supply chain) নিশ্চিত করা। এ দায়িত্ব বাজারের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। কর্মহীন, কর্মক্ষম বেকার, কর্মে নিয়োজিত দরিদ্র জনগণের প্রাতিষ্ঠানিক জীবন চক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে হলে তাদেরকে নগদ অর্থ সহায়তা সাপোর্ট দিয়ে সক্ষমতা তৈরি করা।
১১. সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রবর্তন, সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের পাশাপাশি কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান ধরে রাখা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ক্ষেত্রগুলো বিশাল প্রণোদনার দাবিদার।
১২. জনগণের অর্থ যাতে মুষ্টিমেয়’র হাতে না যায়। প্রণোদনা কেবল প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরকেই দেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে restore করতে হবে; পুনর্গঠিত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে হবে। বিগত ৪ এপ্রিল বিএনপি ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। দীর্ঘ মেয়াদে এমন টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা institutionalize করতে হবে যাতে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনা জাতীয় মহামারীর মতো সংকট মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়, যারা যুদ্ধকালীন সময়ের মতো সর্বদা প্রস্তুত থাকবে একটি in built system এর আওতায়।