সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : [২] পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্্রাধিক কাঁচা ঘর বাড়ি। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরার ব্রান্ড খ্যাত আমের। এদিকে, শহরের কামাননগরে গাছ চাপা পড়ে করিমন নেছা নামের এক নারী মারা গেছে।
[৩] সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর, গবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চাউলখোলা এলাকায়। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০০ ফুটের মত এলাক ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
[৪] জেলার সর্বত্র অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এর ফলে আন্ত:জেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ এবং খুটি উপড়ে পড়ায় জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিসেবা। অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ও টিনের চাল উড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
[৫] সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘন্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিবেগে বিকেল ৪টার পর থেকে সুন্দরবন উপকুলে আম্পান আছড়ে পড়ে। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে পশ্চিম দিকে ঝড়ো হাওয়াটি জেলা শহরের ওপর আঘাত হানে।
[৬] শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, আমপানের প্রভাবে নদ-নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নদীর প্রবল জোয়ারে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দাতিনাখালি, দূর্গাবাটি, পদ্মপুকুর ও গাবুরার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কয়েকটি স্থানে নদীর উপচেপড়া পানিতে জনপদ, ফসেেলর ক্ষেত, চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে।
[৭] জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে ১৪৫টি সাইক্লোন সেল্টার ও ১ হাজার ৭০০টি স্কুল কলেজসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি ১০৩ জনের মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
[৮] জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, জেলায় এবার চার হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। ঘূর্ণিঝড় আমপানের আঘাতে ২০ হাজার ৩৭ জমির আম সম্পূর্ণরূপে ক্ষতি হয়েছে। যার পরিমাণ ১৬ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন। সাতক্ষীরায় এবার সবজি চাষ হয়েছে সাত হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। আম্ফানের আঘাতে ২ হাজার ৭২ হেক্টর জমির সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া এবার জেলার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ২১৩ হেক্টর জমির পান।
[৯] সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ বিভাগের (ওজোপাডিকো) আবাসিক প্রকৌশলী জিয়াউল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের দেড়শ খূঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমগ্র জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে ৭ থকে ৮ দিন সময় লাগবে। এছাড়া শহরের পৌর এলাকার বিদ্যুৎ বরবরাহ সচল করতে ৪৮ ঘন্টা সময় লাগবে।
[১০] জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, সমগ্র জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ চলছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার, রাস্তার উপরে ভেঙে পড়া গাছ অপসারেেণ কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
[১১] এছাড়া তিনি আরও জানান, ঘরবাড়ি ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে সংশ্লিষ্টদের ছবিসহ তথ্য সংগ্রহের জন্য বলা হয়েছে। তালিকা পেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র জানা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাধগুলো জরুরি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানান জেলা প্রশাসক। যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে তাদের মাঝে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিন বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ