শিরোনাম
◈ নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয়: কেন ক্ষুব্ধ মোদি সমর্থকেরা? আল–জাজিরার প্রতিবেদন ◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা

প্রকাশিত : ০৭ মে, ২০২০, ০২:৩৯ রাত
আপডেট : ০৭ মে, ২০২০, ০২:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] সরাইল থানায় চাঁদাবাজি মামলা, ভুল নামে আসামি গ্রেপ্তার, জনমনে প্রশ্ন

আরিফুল ইসলাম, সরাইল প্রতিনিধি : [২] ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতির ছোট ভাইয়ের দায়ের করা চাঁদাবাজি অভিযোগের মামলায় একই ইউনিয়নের যুবলীগের সাবেক সভাপতিকে গ্রেপ্তার করে গত ৩ মে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

[৩] অথচ এ মামলার এফআইআর-এ উল্লেখ করা আসামির নামে সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নামের 'অমিল' রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বিএনপির ছাত্রদলের সভাপতির ভাইয়ের দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা নিয়েও এলাকায় হরেকরকমের আলোচনা-সমালোচনা ঝড় রয়েছে।

[৪] স্থানীয়রা বলেছে, "পুলিশ কোনো রকম প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি এ অভিযোগ নথিভুক্ত (এফআইআর) করায় আসামি নামে 'বড় অমিল ও ভুল'। এ ঘটনায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পাকশিমুল ও অরুয়াইল এলাকায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

[৫] এ মামলার বাদী সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউপির পরমানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. জিয়াউর আমিন-এর ছেলে মো. নোহাশ জিয়া (১৮)। নোহাশের বড় ভাই মো. রিফাত মিয়া পাকশিমুল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি। আর তাদের দায়ের করা মামলায় আসামি হয়ে জেলহাজতে আছেন একই ইউনিয়নের পাকশিমুল গ্রামের বাসিন্দা হাজী আবু সিদ্দিক-এর ছেলে হাজী আজিজুর রহমান। যদিও এফআইআর-এ আসামি'র নাম উল্লেখ রয়েছে’ মো. আ. আজিজ মিয়া"। তবে বাবার নাম ও ঠিকানা'য় মিল আছে।

[৬] জানা গেছে, পাকশিমুল ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি ও রিফাত ট্রেড এজেন্সি'র মালিক মো. রিফাত মিয়া অরুয়াইল বাজারে সেনা, পদ্মা ও অরিয়ন এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলার। অপরদিকে পাকশিমুল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাফা রাফা এন্টারপ্রাইজ-এর মালিক হাজী আজিজুর রহমান পাকশিমুল নতুন বাজারে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করেন এবং বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সরাইল উপজেলায় একমাত্র ডিলার তিনি।

[৭] স্থানীয় লোকজন জানান, কিছুদিন যাবত রিফাত সেনা ও পদ্মা এলপি গ্যাসের পাশাপাশি বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার এনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছেন। এতে আজিজুর রহমান নিষেধ দিয়ে রিফাতকে জানিয়ে দেন "এখানে বসুন্ধরার ডিলার তিনি। যদি বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করতেই হয়, তাহলে তার কাছ থেকে নিয়ে যেন বিক্রি করেন"। রিফাত এ বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে বসুন্ধরা এলপি সিলিন্ডার এনে বিক্রি করতেই থাকেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ হয় এবং বিষয়টি নিয়ে আজিজুর রহমান এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান এবং পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হন।

[৮] গত ২ মে রিফাত সেনা এলপি গ্যাসের স্টিকার লাগানো একটি পিক-আপ ভ্যানে পুনরায় বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার আনেন বিক্রি করতে। খবর পেয়ে আজিজুর রহমান গাড়ি থামিয়ে এর প্রতিবাদ করেন। এতে রিফাত ও আজিজুর রহমানের মধ্যে বিরোধ হয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমানের নামে থানায় চাঁদাবাজি অভিযোগে মামলা করেন ছাত্রদল নেতা রিফাতের পরিবার।

[৯] এদিকে রিফাতের সঙ্গে আজিজুর রহমানের বিরোধ হলেও ছোট ভাই নোহাশ জিয়াকে মামলার বাদী করার বিষয়টি খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ (শুক্রবার) দুপুরে পাকশিমুল গ্রামে দু'দলের সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশ এসে দাঙ্গায় লিপ্ত লোকজনকে ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন পুলিশের ধাওয়ায় ওপেন হার্ড সার্জারি করা শামসুল আলম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি কৃষি জমির আইলে পড়ে স্ট্রোক করে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বেশকিছু লোক দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। এতে একাধিক দারোগাসহ আট পুলিশ সদস্য রক্তাক্ত হন।

[১০] এ ঘটনায় সরাইল থানায় পুলিশ এসল্ট মামলা হয়। পুলিশের দায়ের করা সেই মামলায় ছাত্রদল সভাপতি রিফাত এবং তার বাবা বিএনপি নেতা জিয়াউর আমিন ও রিফাতের মা সাবেক ইউপি সদস্য, বিএনপি নেত্রী বেবি ইয়াসমিন অন্যতম আসামি কিন্তু স্থানীয় পুলিশের কতিপয় অফিসারদের সঙ্গে তাদের দহরমমহরম থাকার কারণেই তারা পুলিশি গ্রেপ্তারকে তোয়াক্কা না করেই এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর তার নামে যেদিন থানায় এ মামলা দায়ের হয়, সেদিন ছাত্রদল নেতা রিফাত পুলিশ এসল্ট মামলার আসামি হয়েও সরাইল থানায় রাত ১১টা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন এবং আইনি ঝামেলা এড়াতে পুলিশের পরামর্শেই রিফাতের ছোট ভাইকে এ মামলার বাদী করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

[১১] যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমানের বাবা হাজী আবু ছিদ্দিক জানান, অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, ছাত্রদল নেতা রিফাতের সঙ্গে মোটা অর্থের চুক্তি করে আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ডেকে নিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। গত ২ মে সকালে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়; কিন্তু বেলা শেষেই আমার ছেলেকে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগে থানা হাজতে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। তড়িঘড়ি পুলিশ এ মামলা সাজাতে গিয়ে এফআইআর-এ নাম ভুল লিখেছে। "আঃ আজিজ মিয়া" হলেন আমার বাবার নাম অর্থাৎ আজিজুর রহমানের দাদা। তিনি বহু আগেই মারা গেছেন। পুলিশ মামলাটি এফআইআর করার আগে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে প্রাথমিক তদন্ত পর্যন্ত করেনি।

[১২] অথচ ছাত্রদল সভাপতি রিফাত ও তার বাবা-মায়ের ইন্দনে কিছুদিন আগে পুলিশ সদস্যদের ওপর বর্বর হামলা হয়েছে। এরআগে রিফাত ঢাকায় একটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় জেল খেটেছে। অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই রিফাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেই সুবাদে রিফাতের সঙ্গে ফাঁড়ির ইনচার্জ-এর সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই পুলিশ এসল্ট মামলার অন্যতম আসামি হয়েও রিফাত এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

[১৩] এ ব্যাপারে ছাত্রদল নেতা রিফাত মিয়ার ছোট ভাই ও এ মামলার বাদী মো. নোহাশ জিয়া দাবি করেন, আমি আমার ভাই রিফাত মিয়ার ব্যবসা দেখাশোনা করি। আজিজুর রহমান আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করেছেন, তাই তার নামে থানায় মামলা দিয়েছি।

[১৪] বুধবার রাত ১১টায় মুঠোফোনে এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, অরুয়াইল ফাঁড়ির ইনচার্জ ও এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, বাদীর দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে এ মামলা নথিভুক্ত (এফআইআর) হয়েছে এবং মামলার একমাত্র আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে আমরা (পুলিশ) বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

[১৫] মামলার এফআইআর-এ উল্লেখ আসামির নামের সাথে গ্রেপ্তাকৃত ব্যক্তির নামের মিল নেই, এমনকি এফআইআর-এ উল্লেখ করা নাম হলো গ্রেপ্তার ব্যক্তির মৃত দাদার নাম- এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই কামরুজ্জামান একেবারে চুপ হয়ে যান এবং কিছু সময় পর তিনি রিফাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, শুনেছি রিফাত পুলিশ এসল্ট মামলার আসামি; তবে সেই মামলার আইও আমি না, এসআই মিজান। তাছাড়া আমি রিফাতকে চিনি না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়