শিরোনাম
◈ বাংলাদেশিদের জন্য কেন সীমিত হয়ে আসছে কয়েকটি দেশের ভিসা? ◈ শেখ হাসিনা-কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ, আজ প্রতিবেদন ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: নিবন্ধন ও জামায়াতের বিচার নিয়ে প্রশ্ন ◈ দিন-দিন বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাড়ছে, সমাধান কী? ◈ পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের মূল্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার! ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ‌কে হা‌রি‌য়ে শিরোপা জ‌য়ের দ্বারপ্রা‌ন্তে বা‌র্সেলোনা ◈ দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি পিন্ডির দাসত্ব করতে নয়: আসিফ মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে যা বললেন জামায়াতের আমির ◈ বজ্রপাত ও ঝড়ে সারাদেশে একদিনে ১৪ জনের মৃত্যু ◈ লোকসানে ধুঁকছে পুঁজিবাজার, বন্ধ ৩০ হাজার অ্যাকাউন্ট, নিষ্ক্রিয় ৫৭ হাজার বিনিয়োগকারী!

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ০২:১৪ রাত
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ০২:১৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যৌবনের ইবাদত আল্লাহর অধিক পছন্দের

সৈয়দা রাকীবা ঐশী : মানবজীবনকে মোটাদাগে শিশুকাল, যৌবন আর বার্ধক্য- এই তিনটি স্তরে ভাগ করা হলেও যৌবনই আসল জীবন। কারণ জীবনকে উপলব্ধি করার, ভোগ করার, সৃষ্টিশীলতা স্থাপন করার বা ধ্বংসশীল আচরণে মেতে ওঠার এটাই সময়। জীবনের যৌবন-পূর্ববর্তী অধ্যায় শিশুকাল আর যৌবনের পরবর্তী অধ্যায় বার্ধক্য, দুটি অধ্যায়ই দুর্বলতা ও অসহায়ত্বে পূর্ণ। শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা-অক্ষমতা মানুষকে এ দুটি পর্যায়ে পরনির্ভর করে রাখে। ফলে নিজের ব্যক্তিত্ব ও অস্তিত্বের সক্ষমতা এ পর্যায়ে প্রমাণের কোনো সুযোগ অনেকের জীবনেই থাকে না।

যৌবনই যে জীবনের শক্তি- এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বাণী হলো, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, এরপর জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে। অতঃপর তোমাদের তিনি বের করেন শিশুরূপে, তারপর তোমরা যৌবনে পদার্পণ করে থাকো, অবশেষে বার্ধক্যে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ তার আগেই মৃত্যুবরণ করে। এটা এ জন্য যে তোমরা যেন তোমাদের নির্ধারিত সময়কাল পূর্ণ করতে পারো এবং তোমরা যেন অনুধাবন করতে পারো।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬৭) মনোবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ যৌবনকে জীবনের ঝড় বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু যৌবনকে শুধু ঝড় বললে ভুলই বলা হয়। বরং যৌবন হলো এক অমিত শক্তির নাম, যাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জীবন-সংসার সৃষ্টি-সৌন্দর্যে মোহনীয় হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে যৌবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলে তার তাণ্ডবলীলায় জীবন ও জগৎ নরকে পরিণত হয়। আমাদের যুবশক্তির ওপর হতাশা চেপে বসছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দূর করা না গেলে, যুব মনে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা না গেলে, মূল্যবোধ আর দায়িত্ববোধের অনুভূতি তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে না পারলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধে শতভাগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলা চলে। বিরাজমান জাতীয় সংকটের দায় আমাদের সবারই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের দরুন। আল্লাহ তাদের তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (আর-রুম, আয়াত : ৪১) আজ গোটা পৃথিবীব্যাপী জঙ্গিবাদের যে ভয়াবহ আস্ফাালন লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশে দেশে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ আর ধ্বংসলীলা যে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা ওই অনিয়ন্ত্রিত যুবশক্তির দ্বারাই সংঘটিত হচ্ছে। আসলে শান্তির অন্বেষায় শান্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, সৃষ্টির নেশায় ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠা সেই আদিকাল থেকেই যুব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিগণিত।

সাম্যভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা লাল ফৌজ, সর্বহারা ইত্যাদি নামে একসময় সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, শ্রেণিশত্রু খতম করতে হত্যাকাণ্ডই ছিল যাদের পরিকল্পিত পন্থা, তারা সবাই ছিল আমাদেরই সমাজের একঝাঁক যুবক। আবার খেলাফতে রাব্বানি, খেলাফতে মুহাম্মদী বা ইসলামী স্টেট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, আনসারুল্লাহ, আইএস ইত্যাদি নামে নরহত্যায় মেতে উঠেছে, তারাও আমাদের সমাজের যুবশক্তি। একইভাবে ভূমিদস্যু, জলদস্যু, বনদস্যু, ডাকাত, চোর, ছিনতাইকারী সবাই যুবক। খুনখারাবি ছাড়াও আরো যত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও অপকর্ম আছে, সেখানেও যুবক শ্রেণির প্রাধান্য বেশি। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, মাদকাসক্তি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, মাদকের কারবার ইত্যাদিতে যুবকরাই বেশি জড়িত। কখনো মানবমুক্তির দর্শনে, কখনো সমাজ গঠনের মন্ত্রে আবার কখনো ব্যক্তিগত জীবনের স্বাবলম্বন ও সমৃদ্ধির অন্বেষায় যুবশক্তি অপশক্তির দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে মানবতাবিরোধী, ধর্মবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধবিজ্ঞানীদের সুদীর্ঘ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক- বহুবিদ কারণে যুবশক্তি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাধের পথে পা বাড়ায়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ধ্যানধারণা ইত্যাদি পরিবর্তিত হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি। ফলে মানুষের চিন্তাচেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মনে রাখা চাই, অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও রীতিনীতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতি মানুষকে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, মানবতা ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলি শিক্ষা দেয়। যৌবনে উন্নীত মানবসন্তান একটি পূর্ণাঙ্গ শক্তি। গতিশীল কোনো শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করার অর্থ হলো তার অবাধ্যতা ও ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলা। সুতরাং আমাদের সন্তানদের চিন্তাভাবনা, আকিদা-বিশ্বাস, রুচি-প্রকৃতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ কল্যাণমুখী করতে শৈশব থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী তাদের গড়ে তুলতে হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শৈশব জীবনের প্রভাতবেলা। এই সময়ে শিশুর প্রবৃত্তি, প্রবণতা- সবকিছুকেই অঙ্কুরিত অবস্থায় দেখা যায়। তাই শৈশবকে বলা হয় ঋড়ৎসধঃরাব ঢ়বৎরড়ফ বা গাঠনিক কাল। এই সময়ে সদভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে পরবর্তী জীবনে সুবিধা হয়। কাঁচা মাটির মতো শৈশবকে শিক্ষক, গুণীজন ইচ্ছামতো রূপ দিতে পারেন, যা কঠিন মাটিতে দেওয়া সম্ভব নয়; সুতরাং প্রতিটি জীবনকে সুন্দর ও গতিময় করে তুলতে হলে শৈশব থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। কেননা মানবজীবনের ক্রমবিকাশে শৈশব একটি বিশেষ পর্যায়, পরিণতির পথে এ পর্যায়টির গুরুত্ব অনেক বেশি। মহানবী (সা.)-ও সন্তানের শৈশবকালীন শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি মানবশিশু ফিতরাতের ওপর (মানবিক সৎগুণাবলি নিয়ে) জন্মগ্রহণ করে। তারপর তার পরিবার কাউকে ইহুদি বানায়, কাউকে নাসারা বানায় আর কাউকে বানায় অগ্নিপূজক।’ (বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ) ইসলামে যৌবনের গুরুত্ব অপরিসীম। তিরমিজি শরিফের এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেন, ‘যৌবন বয়সের ইবাদতকে ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যেসব তরুণ যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে।’ এ বিষয়ে হাদিসের বিশুদ্ধ কিতাব বুখারি ও মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যেদিন (কিয়ামত দিবসে) আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন তিনি সাত শ্রেণির লোককে তার ছায়ায় স্থান দেবেন, তাদের মাঝে একশ্রেণির হলেন এমন যুবক যারা যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন।’ (বুখারি) রাসূলুল্লাহ (স) আরো ইরশাদ করেন, ‘হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে, তার মধ্যে একটি প্রশ্ন করা হবে যৌবনকাল কীভাবে কাটিয়েছো।’ (বুখারি) প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ৫টি জিনিসকে ৫টি জিনিসের পূর্বে গনিমত মনে করো। তার মধ্যে একটি হলো বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে।’ (তিরমিজি শরিফ)

সবশেষে বলা যায়, যৌবনকাল মানবজীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ এ সময় মানুষ বয়সের তাড়নায় ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে বিভিন্ন নিন্দিত ও গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাই হাশরের মাঠে আল্লাহ তা’আলা এ সময়ের হিসাব নেবেন। আর এ কারণেই আমলের ক্ষেত্রেও যৌবনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম।

লেখক : প্রাবন্ধিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়