শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:১১ সকাল
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোন পথে বিশ্বরাজনীতি

শিহাবউদ্দিন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউটার্ন নিয়েছিল বিশ্বরাজনীতি। কর্তৃত্বে থাকা জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার পতন ঘটে। এভাবে পৃথিবী যখন নানা চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে ঠিক তখনই ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে আবির্ভাব ঘটেছে করোনা ভাইরাসের।

একবিংশ শতাব্দীতে তো বটেই, বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পুরো বিশ্বকে অচল করে দেওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ এটাই। এর আগে একই সময়ে পুরো বিশ্বকে লকডাউন করতে হয়নি। দেখতে হয়নি এত বড়ো লাশের মিছিল।

একটু বাঁচার আশায় পরাক্রমশালী দেশগুলোও চেয়ে আছে অসহায়ের মতো। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার, উন্নতমানের ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক শক্তি কিংবা অন্য কোনো কিছু বাঁচাতে পারছে না দেশের মানুষকে। পুরো বিশ্ব যেন আজ এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে।

আর এরই মধ্যে হয়তো নতুন করে আবির্ভূত হতে চলেছে বিশ্ব মোড়লেরা। ঠিক যেমনটি হয়েছিল প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে। এখন প্রশ্ন হলো যদি নতুন মোড়লের উত্থান হয় তবে কারা সেই নতুন মোড়ল?

বর্তমান মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হয়েছে নিউ ইয়র্ক। ভাইরাস সংক্রমণে চীন, ইতালিকে পেছনে ফেলে এক লাফে সর্বোচ্চ স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এমন নাজুক পরিস্থিতিতে অন্য দেশের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, নিজের দেশকে সামাল দিতেই রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাশালী এই রাষ্ট্র। ফলে শুধু বন্ধুরাষ্ট্র ইউরোপ নয় বরং তার কর্তৃত্বে থাকা অন্যান্য দেশের পাশেও দাঁড়াতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণেই অবনতি শুরু হয়েছে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে।

অপরদিকে চীন নিজ দেশের পরিস্থিতিকে সামলে নিয়েছেন। ডাক্তার ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম নিয়ে রওনা দিয়েছেন অন্য দেশেও। যেকোনো মুহূর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন চীন সরকার।

ইউরোপের নামি-দামি প্রতিষ্ঠান যখন নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে ঠিক তখন চীনের বিখ্যাত অনলাইন মার্কেট ‘আলিবাবা’ বাংলাদেশসহ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার প্রায় শতাধিক দেশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও প্রজাতান্ত্রিক, নিরপেক্ষ ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোও এমন মহামারির দিনে চীনকে পাশে পেয়ে চীনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

সঙ্গত কারণেই আমেরিকার পরিবর্তে যেকোনো ইস্যুতেই চীনকে সাপোর্ট করবে এই রাষ্ট্রগুলো। একইসঙ্গে আলিবাবা জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানে রূপ নিবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনলাইন কেনাকাটায় ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে আলিবাবার দিকে ঝুঁকে পড়বে সাধারণ মানুষ।

করোনা-পরবর্তী বিপর্যস্ত পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রণের লড়াই নিয়ে আমেরিকা-চীনের মধ্যে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হবে। এই যুদ্ধে কোন দেশ জয়ী হবে বলা কঠিন। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে চীন এগিয়ে থাকবে এটা বলা যায়। তবে এক্ষেত্রে চীনের উত্থানে সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে ‘ভাইরাস সংক্রমণে চীনের দায়’। অনেকেরই বিশ্বাস করোনা সংক্রমণের দায় চীনের।

পরবর্তী বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার লালসায় চীন এই ভাইরাস সৃষ্টি করেছে। আর এই কথা বারবার বিশ্বকে মনে করিয়ে দিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কোভিড-১৯-কে বলছে ‘চাইনিজ ভাইরাস’।

এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করারও হুমকি দিয়েছে। ফলে বিশ্ব নেতৃত্বে চীন কতটা এগুতে পারবে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

কোভিড-১৯ এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। চীন, ইউরোপের পর এখন দ্রুত ছড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।

গবেষকদের দাবি :এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে দেড় বছর সময় প্রয়োজন। আর এই দেড় বছরে বিশ্ব পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা আন্দাজ করাও কঠিন। ফলে বিশ্ব এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করবে। আর এভাবেই করোনা-পরবর্তী বিশ্বে নতুন করে শান্তির ডাক দেওয়া হবে। ঠিক যেমনটি হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে। নতুন করে শুরু হবে বিশ্বব্যবস্থা। হয়তো আবির্ভাব ঘটবে নতুন নতুন কর্তৃত্বের।

ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্বের কাঠামোগত ওলট-পালট ঘটতে চলেছে এটা বলা যায়। কিন্তু গ্লোবাল লিডারশিপ অন্য জিনিস। করোনায় হয়তো চীন তার কৌশলগত কারণে এগিয়ে রয়েছে। তাই বলে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে কখনোই বৈশ্বিক নেতা হতে পারবে না, এমনটাও ধারণা করছেন অনেকেই। মূলত বৈশ্বিক নেতৃত্বে কারা থাকবেন তা দেখা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়