শাহীন খন্দকার: [২] কোভিড-১৯ ঠেকাতে বাংলাদেশে যে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে, তাতে করে শুরু থেকেই বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। খাবারের সন্ধানে তাদের অনেকেই ভীড় করছেন রাজধানীর মূলসড়কসহ পাড়া মহল্লার মার্কেটগুলোর সামনে।
[৩] এদিকে লকডাউনের মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানোর পর এসব মানুষের বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চললেও সেটা পৌঁছাচ্ছে না সবার কাছে। শেখেরটেক নামার বস্তি বাসিন্দা হাসিনা (৩৫) বাসাবাড়ির কাজ হারিয়েছেন, সন্তানাদী নেই। তিনি বলছিলেন, "আমরা তো কারো কাছে হাত পাততে পারি না। কাজ নাই। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। ভোটার আইডি কার্ড নিয়া গেছে ২০ মার্চ, কিন্তু এখনও সাহায্য আসেনি। সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে বাঁচার কোন কায়দা নাই।
[৪] বাশঁবাড়ী বস্তির পাখী সে ম্যাচে রান্না করিতেন, করোনার কারণে কাজ চলে গেছে । স্বামী প্রাইভেট গাড়ি চালাতো। কাজ নাই ঘরে বসা। বাড়ি ভাড়া এক রুম ৭ হাজার টাকা। বাড়ির মালিক ভাড়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে, দিতে পারছি না । বাচ্চারা আর ডাইল-ভাত খাইতে চায় না। আমি তো মা। এই দুঃখ কই রাখি!
[৫] বিএনপি বস্তিতেই আরো অনেকেই আছেন, যারা চক্ষুলজ্জায় হাত পাততে পারছেন না। সঞ্চয় ভেঙ্গে কয়েকদিন চালিয়ে নিলেও এখন সেটাও শেষ। অগত্যা উপায় একবেলা কিংবা দুই বেলা অভুক্ত থাকা। কিন্তু সেটাওবা কতদিন সেই দুঃশ্চিন্তাও আছে।
[৬] এইভাবে আর কতদিন চলবো, কতদিন থাকবে, আগের মতোন কবে হবে সেইটাই এখন টেনশন। টিভিতে দেখাইতেছে সরকারিভাবে নাকি বাসায় বাসায় দিয়া যায় চাউল-ডাল, আমাদের এইখানে তো পাই নাই।
[৭] ঢাকা শহরে কিছুক্ষণ ঘুরলেই মোড়ে মোড়ে কিংবা রাস্তার ধারে অসংখ্য মানুষকে দেখা যাচ্ছে, যারা মূলত খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে এসেছেন পথে। লাজ-লজ্জা, করোনা আতঙ্ক সবকিছু ছাপিয়ে ক্ষুধা নিবারণই এখন তাদের কাছে মূখ্য বিষয়। গাড়ি দেখলেই দৌড়ে ছুটে। খাদ্য সহায়তা দেখলেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ার দৃশ্য।
[৮] খাবার নিয়ে যারা আসছেন, তারাও হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দুয়েকজনকে দিয়েই আবার দ্রুত সরে পড়ছেন। ফলে কেউ পাচ্ছে, আবার পাচ্ছেন না। আগারগাঁও পথে বসে থাকা মানুষের অভিযোগ "যারা ভোট দিছে, মিছিল করছে তারাই পাইতেছে। আমরা এইখানকার ভোটার না।
[৯] রাজধানীর মহাখালী কাচাবাজারে ত্রাণ নিতে আসাদের অভিযোগ ভোটার না বলেই সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না তাদের। পপি বেগম কাজ করতেন গামের্ন্স শিল্পে । গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই তিনি এসে ছিলেন, সঙ্গীদের সাথে চাল ডালের আশায় । এসে জানতে পারেন তার নাম নাই লিস্টে। কিছুই পাই নাই।
[১০] এরকম অভিযোগ অবশ্য ঢাকার আরো অনেক এলাকার রিকশা চালকসহ বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজে কর্মরতদের। রাজধানী ঘুরে এমন অভিযোগ ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় তাদের সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না ! রিকশা নিয়ে বাহির হলে পুলিশ উল্টে ফেলে রাখছে ।
[১১] রিকশা চালক ফরিদ অভিযোগ করে বলেন, খাবো কি, কে দেবে খাবার। এভাবে চলতে থাকলে আত্মহত্যা ছাড়া পথ খোলা নেই। প্রশ্নের জবাবে জানায় রাজধানীর ভোটার না তাই সরকারি সাহায্য কমিশনার দিচ্ছেন না। রিকশা নিয়ে রাস্তায় বাহির হলে পুলিশের বাধা করোনা ছড়াই এই অজুহাতে । তাই না খেয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর চেয়ে একবারে মৃত্যু অনেক ভালো বলে রিকশা চালক ফরিদ এর কথা।