চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রতিবেদন : কোনো মৌসুমেই নগরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারছে না। বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলার দুর্ভোগ। এখন এই করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও পোহাতে হচ্ছে মশার অসহনীয় যন্ত্রণা। ঘরে-বাইরে, বাসা কিংবা অফিস সব জায়গায় মশার উৎপাত বাড়ছেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মশা নিধন কার্যক্রম কোনো সময়েই গতি পায়নি। অথচ চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের তথ্যমতে, গত ৪ বছরে মশক নিধন কর্মসূচিতে ৪ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। মশার এই প্রচণ্ড উপদ্রবের মধ্যেই আবার চসিক মশা নিধনে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় গত ফেব্রুয়ারিতে। এছাড়া নগরীর নালা-খাল বদ্ধ অবস্থায় থাকার কারণে এই মৌসুমে মশা বাড়ছে বলে জানান কীট গবেষকরা।
নগরবাসীর অভিযোগ, আগের বছর এই সময়ে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন নালা-নর্দমা ও ভবনের আশেপাশে ওষুধ ছিটাতেন। কিন্তু এ বছর ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। ঘরে কয়েল জ্বালিয়ে ও মশার মারার ওষুধ স্প্রে করেও মশার উৎপাত থেকে রেহাই মিলছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর কিছু কিছু এলাকায় প্রায় ৬-৭ মাস আগে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানো হয়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে এ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কেউ কেউ কেউ বলছেন ৬-৭ মাস পূর্বে যে ওষুধ প্রয়োগ করেছে সেটাও কোনও কাজে দেয়নি। কেবল লোকদেখানো ওষুধ ছিটানো হলেও মশা কমছে না বেড়েই চলেছে। এমনকি নগরীর পাঁচ তলা, সাত তলা, আট-নয় তলা ফ্ল্যাটে, অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছে না লোকজন। এই পরিস্থিতিতে সকলের অভিযোগের আঙ্গুল চসিকের দিকে।
বছরে বছরে এরকম ফটোসেশন অনেকবারই দেখেছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। কিন্তু মশার উপদ্রব তাতে বরং বেড়েছে দিন দিন।
বছরে বছরে এরকম ফটোসেশন অনেকবারই দেখেছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। কিন্তু মশার উপদ্রব তাতে বরং বেড়েছে দিন দিন।
বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা নাজির হোসেন বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় রাত দিন ২৪ ঘন্টা বাসাও স্বস্তিতে বসতে পারছি না। মশার উৎপাত মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এসব মশা আসছে কোত্থেকে বুঝতে পারছি না। চসিকও হাত গুটিয়ে বসে আছে। ছেলে- মেয়েরা ঠিকমতো পড়াশোনাও করতে পারছে না। মশার কয়েল জ্বালিয়ে, স্প্রে দিয়েও মশা প্রতিহত করতে পারছিনা। চট্টগ্রাম শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন বাকলিয়া এলাকায় মশার ওষুধ বা স্প্রে কবে প্রয়োগ করেছে মনে নেই। ৭/৮ মাস আগে সিটি কর্পোরেশন যেসব ওষুধ ছিটিয়েছে তা সম্ভবত ভেজাল ঔষুধ। যার কারণে কোনও কাজ দেয়নি। অনেক সময় বিভিন্ন নিউজ, ফেসবুকে দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে মেয়র নিজ হাতেই মশার ওষুধ ছিটাচ্ছেন। আমার মনে হয়, এগুলো লোকদেখানো ছাড়া আর কিছু না।’
আগ্রাবাদ এলাকার নজরুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার এলাকায় মশার ওষুধ একবারও ছিটানো হয়নি। বৃষ্টির কারণে এখন মশা আরও বেড়ে গেছে। সারাদিন দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখি তবুও কিভাবে মশা ঢুকে বুঝতে পারিনা। আমরা যারা বিল্ডিংয়ে থাকি তাদের এই দশা, তবে যারা ঝুপড়ি কিংবা কলোনিতে থাকেন তাদের কি অবস্থা আল্লাহ জানেন। বিশেষ করে শিশুরা মশার কামড় সহ্য করতে না পেরে কান্না কাটি করে সারাক্ষণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়র আ জ ম নাছির যদি দায়িত্ব নিয়ে পুরো চট্টগ্রাম শহর নজরদারিতে রেখে মশার সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করাতেন এবং মশা নিধনের জরিপ চালাতেন তাহলে নগরবাসীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। মেয়র মানে নগরপিতা। একজন পিতা তার সন্তানকে ভালো রাখতে কত না কষ্ট করেন। কিন্তু নগরপিতা আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্য কী করলো? প্রতিদিন মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ। কিন্তু আমাদের নগরপিতার কোনও মাথা ব্যথা নেই।’
আলকরণ এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝিমিয়ে পড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মশা মারার কার্যক্রম। মেয়র পদে মনোনয়নের আগে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকলেও মনোনয়ন হারানোর পর অবস্থা আরও খারাপ। রীতিমত মশার নগরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম।’
মোহরার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘মশার যন্ত্রনায় শুধু রাতে নয়, দিনেও থাকা দায়। মশার কয়েল স্প্রে করেও দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন এক বছরে একবারও মশার ওষুধ ছিটিয়েছে কিনা কেউ বলতে পারবে না। সিটি করপোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ মশা নিধন সেটাই তারা করতে ব্যর্থ। এর দায় কাউন্সিলর-মেয়র কেউ ই এড়াতে পারেন না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুর মান্নান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের তৎপরতায় মশা অনেক কমে গেছে। কেউ যদি বলে মশা বেড়ে গেছে তাহলে বলতে হয়, তাদের অসচেতনতার কারণেই বাসা-বাড়িতে মশা বেড়েছে। সবার আশপাশে খোলা জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে মশা কমে যেতো।’
আপনার মতামত লিখুন :