রাশেদা রওনক খান : আমাদের দেশে হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের মাঝে ২৬,০০০ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী আছেন যাদের প্রতিদিনকার টিকাদান কর্মসূচির কারণে বিশ্বে আমরা সুপরিচিত। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপক সাফল্যের জন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। পুরো বিষয়টিই আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার গবেষণা কাজে দুই বছর কড়াইল ও ভাসানটেক বসতিতে কাজ করার সময় খুব কাছ থেকে তাদের কাজ দেখিছি, তারা কীভাবে প্রতিনিয়ত মা ও শিশুদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজটি করে থাকেন। কিন্তু এই ২৬,০০০ স্বাস্থ্য সহকারী এই মুহূর্তে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া মানে কেবল এই ২৬ হাজার নয়, কতো লাখ মানুষ রিস্কের মাঝে আছে, তা ভেবে দেখা দরকার। তাছাড়া তাদের একটি মাস্ক ছাড়া কিছুই নেই যে তারা নিজেরা সুরক্ষিত থাকবেন কিংবা তাদের কাছে আসা মা ও শিশুরা সুরক্ষিত থাকবেন। সারাদেশে দশটি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে মা ও শিশুকে নিয়মিত টিকাদান, সপ্তাহে সাধারণত সারা বাংলাদেশে চারদিন টিকা দেওয়া হয়। সারাদেশে এক লাখ বিশ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সহকারীরা টিকা দিয়ে থাকে এবং উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে স্থায়ী কেন্দ্রেও দেওয়া হয়, সাধারণত প্রতিটি সেশনে গড়ে ৫০ থেকে ১০০ জন মা ও শিশুর আগমন ঘটে। এই কার্যক্রম চলমান থাকলেও তাদের কোনো পিপিই সরবরাহ করা হয়নি। যদিও আমি মনে করি পিপিই দিলেও ইপিআই কাজ চলমান রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কারণ পিপিই দিলে শুধু টিকাদানকারী সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু আগত ব্যক্তি, শিশু, গর্ভবতী মহিলারা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। তাই ইপিআই বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। নিরাপদ দূরত্ব তিন ফুট, কিন্তু ইপিআই কাজ হচ্ছে ইনজেকশন পুশ করা যা দূর থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। ইপিআই কাজ কোনো জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নয়, এটা যদি সাময়িক স্থগিত করলে পরবর্তীতে পুশিয়ে নেওয়া সম্ভব। আমরা যদি হিসাবটা দেখি, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার কেন্দ্র চলে। প্রতি কেন্দ্রে ৫০ জন লোক আসলে ১৫০০০ী৫০= ৭৫০০০০ হাজার লোক ঘরের বাইর হয়, তারা কতোটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। যেহেতু কেন্দ্রগুলো অস্থায়ী তাই অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক চাচ্ছে না তার বাড়িতে এতো লোক আসুক। এই কর্মসূচি আপাতত ১৪ দিন স্থগিত থাকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ধরুন কোনো বাচ্চা অসুস্থ থাকলে তাকে কিন্তু ওই মাসে টিকা না দিয়ে পরের মাসে দেওয়া হচ্ছে, তাতে যেহেতু সমস্যা হয় না তাই সাময়িক বন্ধ থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। গর্ভবতী মহিলাদের টিটি টিকা দেওয়া হয় যা গর্ভের শুরু থেকে নয় মাসের মধ্য এক ডোজ বা দুই ডোজ দিলেই হয়, সে ক্ষেত্রে ১৪ দিনে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু টিকা দিতে এসে যদি তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকেন তাহলে তার ক্ষতি নিশ্চয়ই আরও বেশি হবে। বিষয়টা আমাদের ভেবে দেখার এখনই সময়। ফেসবুক থেকে