মাজহারুল ইসলাম : দিনকে দিন বাড়ছে বহুলআলোচিত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এশিয়ার পর ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে চীনসহ ১২টি দেশে নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়েছে। নিমোনিয়া সদৃশ্য এই ভাইরাসে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।
এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ ভাইরাস ঠেকাতে বাংলাদেশেও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোসহ অন্যান্য প্রবেশপথে করোনাভাইরাস স্ক্রিনিং (শনাক্ত) কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। জনসচেতনতা বাড়াতে এ সংক্রান্ত প্রচার কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রাণঘাতি এই করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা ৭টি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা, গণপরিবহন এড়িয়ে চলা, বেশি বেশি ফলের রস ও পানি পান করা, ঘরে ফেরার পরই হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে দু’হাত ভালো করে ধুয়ে নেয়া, কিছু খাওয়া কিংবা রান্নার আগে তা ভালো করে ধুয়ে নেয়া, ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করা এবং ময়লা কাপড় যতো দ্রæত সম্ভব ধুয়ে ফেলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি প্রবেশপথে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রোগীদের স্পর্শ না করে অসুস্থতা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমানবন্দরের আক্রান্তকে আলাদাকরণ ওয়ার্ড। কারণ চীন থেকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়া এই করোনাভাইরাস যে কোনও বাংলাদেশে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আগাম সতর্কতামূলক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এবং আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে নজরদারি কার্যক্রম।
এসবের জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে রেফারেল হিসেবে নির্দিষ্ট করে ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে সিডিসি ও আইইডিসিআরের (রোগতত্ত¡, রোগয়িন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠান) ৪টি হটলাইন -০১৯৩৭-১১০০১১, ০১৯৩৭-০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ এবং ০১৯২৭৭১১৭৮৫। এ ব্যাপারে আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে চীনের গেøাবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে উহানের জিনহুয়া হাসপাতালের ৬২ বছর বয়সী চিকিৎসক লিয়াং উডং। এই ভাইরাসটির সংক্রমণের বিস্তৃতি ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধরে এই শহরটি বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানায়, গতকাল পর্যন্ত সেখানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৮৭ জন। এর বাইরে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়ও আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :