শিরোনাম
◈ ফলকার টুর্ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্ট ◈ ভোলায় স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: প্রধান আসামিসহ তিনজন গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত নেতারা দল থেকে বহিষ্কৃত ◈ মুরাদনগরে মাদককারবারির অভিযোগে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা, একজন গুরুতর আহত ◈ গণঅভ্যুত্থান সরকারের কেউ কেউ ‘লুটপাট’ করে বেহুঁশ হওয়ার দশা: ইশরাক হোসেন ◈ যে কারণে পিআর পদ্ধতি চায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন ◈ ‘মেগাস্টার’ শব্দকাণ্ডে বিতর্ক: “আমি মানুষটা ছোট, অন্যকে ছোট করব কীভাবে” — জাহিদ হাসান ◈ এবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শিল্পকলার চারুকলা পরিচালক ◈ কেশবপুর পৌরসভার  সাবেক মেয়র রফিকুল গ্রেফতার ◈ বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় ◈ পার্বত্য চট্টগ্রামের একশ স্কুলে এবছরই ই-লার্নিং চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:৫৮ সকাল
আপডেট : ২২ জানুয়ারী, ২০২০, ০৭:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গণমাধ্যমের বিপদ

 

তুষার আবদুল্লাহ : আপনারা তো বিপদে আছেন। ভাবলাম, আশপাশের কাউকে কথাটা বলা হলো। চায়ের দোকানে ভিড়ে ঠাসা। কিছুক্ষণ আগে সূর্য ডুবলো। দেখতে দেখতেই অন্ধকার নেমেছে সারিয়াকান্দির যমুনার পাড়ে। চায়ের দোকানে যে আলো জ্বলছে তা বাইরের অন্ধকার জয় করতে পারছে না। আকাশ তারায় ভরা। তবে চাঁদ এখনো আলো ছড়ায়নি। পাঁচ দিনের পুরনো চাঁদ দেখা দিতে রাত দশটা বেজে যেতে পারে। নদীর পাড় থেকে এসে চায়ের দোকানে বসি। আড্ডায় মেতে আছেন যারা এখানে, তাদের সবাই জেলে। কিছুক্ষণ আগেই নৌকা থেকে উঠে এসেছেন। চায়ের কাপ সামনে নিয়ে মাঘের সন্ধ্যায় ভারতীয় চ্যানেলের সিনেমা, ধারাবাহিক দেখছেন আর আলাপ করছেন মাছ বাজারের লাভ-লোকসান নিয়ে। চায়ের কাপ হাতে তাদের আলাপ শুনছিলাম। একজন বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই কথাটি বললেন। আমাদের বিপদে থাকার কথা। আমি তারপরও নিশ্চিত হওয়ার জন্যে জানতে চাইলাম, কীসের বিপদ ভাই? উত্তরে তিনি বললেন, আপনাগো আমরা দেখি না।

বললাম, খবর দেখেন না? পাশের জন বললেন, খবর দেইখা লাভ কী? বড় লোকের কথা কয়। আবার আমরা যেইডা দেহি, টিভিতে গেলে হেইডা উল্টায় যায়। জানতে চাইলাম, কি উল্টায় যায়? তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, নিজেরে জিগায়া দেহেন। যেই খবর টোকান হেই খবর দেননি। আরেকজন নিজের দিকে মনোযোগ নিয়ে বললেন, দেখো আমি নিজে যুদ্ধ করেছি। বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের রেখেছি। যেই বেডা নতুন বিয়া করা বউ লইয়া খেরের পালায় গিয়া রইছে, আর ঘর ছাইড়া দিছে আমাগো, হেই আমরার আর ওই বেডার পেটে ভাত নাই। যেই বেডা আছিল বিরোধী, হেই বেডা, হের পোলা বলে মুক্তি আছিলো। চালের দাম, পাটের দাম, বন্যা, নদীভাঙনের খবরগুলোও নাকি ভেজালে ভরা। ওনাদের একজন বললেন, রাজনীতি নিয়া মাথা ঘামাই না আর। কিন্তু গ্রামের মাইয়াডারে কে তুইলা লইয়া ইজ্জত নষ্ট করলো, হেই খবরটা হাচা দিতে সমস্যা কি? মাদক বেচে কেডা আর ধরা খায় কেডা? বুঝলাম তারা যা দেখছেন, আর গণমাধ্যম যা দেখাচ্ছে, তার মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গেছে অনেক। গোয়ালঘর থেকে দুধ বাজারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে যা হয় আর কি! সারিয়াকান্দির ওই দোকানে থাকা জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদের মাঝে তরুণও ছিলেন অনেকে। বললাম, আপনারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তাদের সঙ্গে বয়স্করাও যোগ দেন। তাদের কথা, তরুণদের পাশাপাশি তারাও মাঝে মধ্যে দেখেন। এখানেও ভারতীয়সহ বিদেশি গান, সিনেমা এবং ধারাবাহিক।

অবাক হয়েছি সারিয়াকান্দির তরুণদের মধ্যে জাপানি ও কোরিয়ান সিরিজের জনপ্রিয়তা দেখে। তাদের কথা হলো, বাংলাদেশের ইউটিউব চ্যানেল দেখে তারা হাঁপিয়ে উঠেছে। বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য নেই। স্বাস্থ্য, ধর্মীয়, রন্ধন প্রণালি, উপদেশ আর সস্তা যৌনতার সুড়সুড়ি ছাড়া নতুন কিছু নেই। রাজনৈতিক গালি পাল্টা গালিও এখন কানে নতুন স্বাদ দেয় না। তাই তারা টেলিভিশনের মতো ইউটিউব, ইন্টারনেটের বাংলাদেশের পসরা থেকেও মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন। পত্রিকার দুর্গতি তো আরও আগেই শুরু হয়ে গেছে।
সারিয়াকান্দি থেকে যাত্রা করি নীলফামারীর ডালিয়া। মাঘের যেমন শীত ও কুয়াশা আশা করছিলাম, তা মোটেও নেই। ভোরের চায়ের জন্য তিস্তা ব্যারাজ পার হয়ে যাই লালমনিরহাট প্রান্তে। সেখানে দেখা হয়ে শৈশবের দুর্লভ বিস্কুটের সঙ্গে। চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে খেতে খেতে গল্প করি স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে। তারা নিজেদের সন্তানদের নিয়ে হতাশ।

বিশেষ করে ছেলে সন্তানরা সারা দিন মোবাইল-ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে থাকে। গরু বিক্রি করে মোবাইল কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মোবাইলে আজেবাজে ভিডিও দেখেই নাকি গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য তারা গণমাধ্যমকে দায়ী করলেন। তাদের মতে, গণমাধ্যম দিকনির্দেশনামূলক কোন অনুষ্ঠান দেখায় না। আগেকার নাটক সিনেমা যেমন ছিল এখন সেটা বদলে গেছে। এখন যেদিন দেখা, সেদিনই প্রেম ভালোবাসা এবং সবকিছু। রাজি না হলে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া বা ধর্ষণ। তারা বলছেন, আগে প্রেম হতো ধীরে। এখন গণমাধ্যম প্রেম ভালোবাসা নিয়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। চা শেষ করে অটোরিকশা নিয়ে ফিরছিলাম জলঢাকার দিকে। সঙ্গী হলেন স্থানীয় এক ব্যাংক কর্মকর্তা। কুশল বিনিময়ের পরেই বললেন, আপনারা নাকি ভালো নেই। চোখের ইশারায় জানতে চাই, কী? তিনি বললেন, মিডিয়ার বেতন ভাতায় নাকি টান পড়ছে? ছাঁটাইর খবরও পাই বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে। বললাম, কোথাও কোথাও হয়তো এমন খবর আছে। তিনি বললেন, গণমাধ্যম পাঁচ রাস্তার মোড়ে এসে আটকায়ে গেছে বুঝলেন? বললাম, বুঝতে পারিনি। তিনি হেসে উত্তর দেন, পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন, ওয়েবপোর্টাল, ইউটিউব, সবখানে একই আলাপ, একই কথা। রান্নার নতুন তরকারি লাগবে ভাই। স্বাদ না বাড়ালে আপনাগো বিপদ বাড়বেই। বাংলাট্রিবিউন। লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়