পলাশবাড়ী প্রতিনিধি : গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সাগর সরকার শাওন হত্যা মামলার আসামি নিজ বড় ভাই তানজির আহম্মেদকে (৩০) আটক করেছে থানা পুলিশ।
নিহতের অপর বড় ভাই বেনজির আহম্মেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মঙ্গলবার পলাশবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা সূত্রে জানা যায়, নিজের ছোট ভাই সাগর সরকার শাওনের স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য নিজ ছোট ভাই শাওনকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বড় ভাই তানজির আহম্মেদ। পুলিশের হাতে আটক হত্যাকারী তানজির নিজের স্বীকারোক্তিতে লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের কথা বলেন।
ঘটনার দিন সোমবার কোমরপুর বাজার সংলগ্ন একটি বিশাল ইসলামী জলসার আয়োজন করে এলাকাবাসী। ওই দিন বিকেল থেকে জসলার মাইকের আওয়াজ কোটা কোমরপুর বাজার এলাকা মুখরিত ছিলো।
এদিকে বড় ভাই তানজির হত্যা পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজ ঘর থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র দা নিয়ে এসে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গোপন করে রেখে ছোট শাওনকে খুনের উদ্দেশ্যে। দুই ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি হওয়ায় ছোট শাওনের উপর নজর রাখে বড় ভাই তানজির। ওইদিন রাত ৯টার দিকে বড় ভাই তানজির কৌশলে ছোট ভাই শাওনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে যায় নিকটবর্তী একটি পুকুর পাড়ের অন্ধকার জায়গায়। এসময় শাওন কিছুটা শংকিত হয়ে ফিরে আসতে ধরলে তানজির তার কাছে থাকা দা দিয়ে পিছন থেকে শাওনের মাথায় স্বজোরে আঘাত করে। শাওন মা-মা বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর শাওনের মাথায় পরপর আরো কয়েকটি এলোপাথারী আঘাত করে।
ওই সময় ইসলামী জসলার মাইকের আওয়াজের কারণে চিৎকারের শব্দ কেউ শুনতে পায়নি। পরে তানজির শাওনের লাশ টেনে-হেচরে পাশর্^বর্তী জৈব বায়োগ্যাস প্লান্টের হাউজে ফেলে দেয়। পরদিন থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ইট চাপা দিয়ে ডুবিয়ে রাখা অবস্থায় শাওনের লাশ উদ্ধার করে। এভাবেই নিজের লোভ-লালসা চরিতার্থের জন্য পথের কাঁটা নিজের মায়ের পেটের আপন ছোট ভাই শাওনকে দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় করে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবে আবারো নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসে তানজির।
থানা পুলিশ গত শনিবার কৌশলে নিহতের পরিবারের সকল সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। এসময় নিহতের স্ত্রী রোজিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে স্বীকার করেন তার স্বামীর বড় ভাই তানজির তাকে প্রেম নিবেদনের কথা বলে।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) মইনুল হোসেনের নেতৃত্বে পলাশবাড়ী থানার পুলিশ পুরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মতিউর রহমান ও এসআই সঞ্জয় কুমার সাহাসহ সঙ্গীয় ফোর্স তানজিরের বসতবাড়ীর শয়ন ঘরে অভিযান চালিয়ে তানজিরকে আটক করে।
আটক তানজিরের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন থেকে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রোজিনাকে প্রেম নিবেদন করে আসতো। প্রথমে রোজিনা তাকে পাত্তা দিতেন না। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রতিনিয়ত মোবাইলে বিভিন্ন কথাবার্তা হতে থাকে। যদিও তা দৈহিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ে উঠেনি।
তাদের সম্পর্কের বিষয়টি ছোট ভাই শাওন জানতে পারার কারণেই হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন তানজির। পরে তার শয়ন ঘরের বিছানার নিচ হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১২ জানুয়ারি মূল হত্যাকারী তানজির আহম্মেদকে আদালতে প্রেরণ করে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত আনুমানিক ৯টা হতে নিখোঁজ হয় শাওন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে শাওনের স্বজনরা কোমরপুরবাজার এলাকায় (ভগবানপুর) মৃত আজিজার রহমান বিএসসি’র বাড়ির অদূরে একটি বায়োগ্যাস প্লান্টের পাশে রক্তের দাগ দেখতে পান। রক্তের দাগ দেখতে- দেখতে প্লান্ট পর্যন্ত পৌঁছামাত্র প্লান্টের ভিতরে নিহত শাওনের লাশের সন্ধান মেলে। সম্পাদনা:জেরিন