নিউজ ডেস্ক : সরকার ক্যাসিনো কালচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়ে শুদ্ধি অভিযান সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেও এখন আর তা দৃশ্যমান নয়। ভোরের কাগজ
ঢাকা ও চট্টগামে প্রায় ৫০টি অভিযান হলেও জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় নেই কোনো অভিযান। দুদকের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই নীরব রয়েছে। সারাদেশে টেন্ডারবাজ ও কালো টাকার মালিকরা এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। অভিযানের ব্যাপ্তি না বেড়ে কার্যত তা থেমে গেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সাধারণ মানুষের বাহ্বা কুড়ানো অভিযানের কেন এমন দশা এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারো কাছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকার কথা প্রতিনিয়ত বলে আসছেন। কিন্তু মাঠে এর কোনো প্রতিফলন নেই।
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, শুদ্ধি অভিযান হঠাৎ করে শুরু হয়েছিলো, আবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা পলিটিক্যালি করতে হবে। সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে করতে হবে। তা না হলে এমন অভিযানে কোনো সুফল মিলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে রাজপথের শক্তি। এ জন্য শুদ্ধি অভিযানটা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী। এর আওতায় যারা আসত তারা আইনের আওতায় এলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা নিয়ে টানাটানি দেখা যেত। ওই শক্তির কারণে অন্য কেউ রাজপথে নামতে পারেন না, কোনো আন্দোলন করতে পারেন না। তিনি মনে করেন, মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে যেটা করা যেতে পারে রাজনৈতিক দলগুলোর সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে কাউকে ছাড় না দিয়ে সারাদেশে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
তবে র্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেছেন, অভিযান বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি আমরা যে অভিযান চালিয়েছি সেগুলোর তদন্ত কাজ করছি। আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়মসংক্রান্ত তথ্য পেলে ভবিষ্যতেও অভিযান চালাতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।
১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে প্রথম ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর আর কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সারাদেশে কয়েক হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত করছে র্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। র্যাব ও আইনশৃখলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ডাকযোগে ও নানা মাধ্যমে শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। সেগুলো প্রকাশ্যে ও গোপনে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
গত দুই মাসে মোট ৫০টি ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি র্যাবের। বাকি ২০টি পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার। অনুলিখন : জহুরুল হক