সমকাল : এদের মধ্যে ৩৬ জনই ফাঁসির দন্ডদেশপ্রাপ্ত। তাদের অবস্থান সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের গ্রেপ্তারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ লক্ষ্যে স¤প্রতি আসামিদের ঠিকানা অনুযায়ী ৩০ জেলায় ও থানায় ছবিসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিদেশে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের ফেরাতেও পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আসামিরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে দেশত্যাগ করে। তাদের মধ্যে অনেকের সন্ধান এখনও মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েক পলাতক আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শেষ হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৯ বছরে ৪০টি মামলায় মৃত্যুদন্ড, আমৃত্যু কারাদন্ড সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ৯৪ যুদ্ধাপরাধীর। বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে সাজাপ্রাপ্ত ৪৬ জন। পলাতক আসামির সংখ্যা ৪৮ জন। দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলায় তদন্ত বা বিচারকাজ চলছে এমন পলাতক আসামির সংখ্যা ৮৪ জন।
ট্রাইব্যুনাল যে ৪০টি মামলার রায় ঘোষণা করেছেন, সেগুলোতে মোট আসামি ১০৪ জন। তাদের মধ্যে রায় হওয়ার আগেই কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৮জন এবং রায়ের আগে পলাতক অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ২জনের।
মৃত্যুদন্ডদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হলো, জামায়াত নেতা ফরিদপুরের আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মো. আশরাফুজ্জামান খান ওরফে নায়েব আলী এবং গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের চৌধুরী মঈনউদ্দিন, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ হাছান আলী, কিশোরগঞ্জ করিমগঞ্জের গাজী আব্দুল মান্নান, নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে নাছির ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির ও মো. হাফিজ উদ্দিন, জামালপুরের আব্দুল মান্নান, আশরাফ আলী ও আব্দুল বারি, শরীয়তপুরের পালং থানার ইদ্রিস আলী সরদার, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সৈয়দ মোহাম্মাদ হুসাইন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আবু সালেহ মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, রুহুল আমীন, আবু মুসলিম মোহাম্মাদ আলী, নাজমুল হুদা, আব্দুর রহিম মিয়া, আব্দুল জব্বার মন্ডল, জাছিচার রহমান ওরফে খোকা, আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডল, মনতাজ আলি বেপারি ওরফে মমতাজ, মৌলভীবাজার রাজনগরের নেছার আলী ও মোবারক মিয়া, নোয়াখালীর সুধারামের আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর, মৌলভীবাজারের আব্দুন নুর তালুকদার, আব্দুল মোছাব্বির মিয়া, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইসলাম, নেত্রকোনার পূর্বধলার শেখ আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা, আব্দুল খালেক তালুকদার, কবির খান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুর উদ্দিন, নেত্রকোনা আটপাড়ার হেদায়েত উল্লাহ আনজু।
এ বিষয়ে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক এম সানাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পলাতকদের ছবি সংবলিত চিঠি সম্প্রতি ৩০টি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্নিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিসহ অন্য কর্মকর্তাদের কাছে তদন্ত সংস্থা থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিদেশে পলাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম গণমাধ্যমকে বলেন, সাজাপ্রাপ্তদের রায় কীভাবে কার্যকর হবে, সেটা রায়ে বলা আছে। দেশের বাইরে যেসব ফাঁসির আসামি যুদ্ধাপরাধী পলাতক আছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে রেড অ্যালার্ট জারি করা হলেও গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শুরুতেই রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে পালিয়ে যায় জামায়াতের আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার। পিরোজপুরের সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির নেতা জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ও ফরিদপুরের বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির পরও তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। অনুলিখন : মাজহারুল ইসলাম, সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব