আমাদের সময় : গত দশ বছরে ব্যাংক খাতে নানা জালিয়াতি ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা সামনে এসেছে। দু’একটি ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জবাবদিহিতার আওতায় এলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পর্ষদ দায়মুক্তি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের দোষারোপ করা হয়েছে সব কিছুতেই। তাদের অপসারণসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। জেলও খেটেছেন। কিন্তু দোষী হয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন পরিচালকরা। এ ধরনের অপসংস্কৃতির অবসান চান অর্থমন্ত্রী।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানিয়েছে, এবার সর্বোচ্চ জবাবদিহিতার আওতায় আসছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালকরা। তাদের সামগ্রিক কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করা হবে। ঋণ অনুমোদন বা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কোনো কর্মকান্ডে অযাচিতভাবে কেউ হস্তক্ষেপ করছেন কিনা এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতোমধ্যে তিনি ব্যাংকের পরিচালকদের নিয়ে কর্মশালাও করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্যায় করে কোনো পরিচালক পার পাবেন না। তাদের সব কর্মকান্ডে মনিটরিং করা হবে।
পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের বাছাই করা হবে। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য না দিয়ে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা, সততাকেও আমলে নিয়ে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ করা হবে। প্রয়োজনে মৌখিক পরীক্ষার মতো পদ্ধতিও চালু করা হবে। ব্যাংক পরিচালকদের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে আমার কাছে কোনো সুপারিশ এলে তা গ্রহণ করা হবে না। যোগ্য ব্যক্তিদের হাতেই ব্যাংক তুলে দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, পরিচালনা পর্ষদের সম্পৃক্ততা ছাড়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতি করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে এবার বড় পরিসরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে সীমিত পরিসরে একবার পরিচালকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।
বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৮টি। যার মধ্যে ৬টি বাণিজ্যিক ও ২টি বিশেষায়িত। এসব ব্যাংকে প্রায় ১০০জন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। যাদের বেশিরভাগই সাবেক আমলা। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবীও রয়েছেন। অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে তদবিরসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিচালকদের যে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা আছে। তা পরিপালনের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অনুলিখন : ম. সিদ্দিকা, সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :