মাহফুজা অনন্যা: নাজমা নামের এক বাংলাদেশি নারী সৌদি আরব থেকে লাশ হয়ে ফিরে এসেছেন। তিনি সৌদি আরব গিয়েছিলেন জীবিকার সন্ধানে, ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য। না তিনি নবী করীমের (সা.) দেশে গিয়ে বাঁচতে পারেননি। গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে কার্যত নাজমা হয়েছিলেন যৌনদাসী। যৌন লোলুপ সৌদি পুরুষদের সম্ভোগের শিকার নাজমা ওই ঘৃণ্য জীবন থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। তার দেহ নিয়ে ছিনিমিনি খেলে সৌদি মুসলমান ভাইয়েরা তাকে লাশ বানিয়ে ছেড়েছে। নারী অনেক দেশেই অধিকার এবং মর্যাদাহীন। সৌদি আরবে আরও বেশি। সেখানে নারীরা পুরুষদের মনোরঞ্জনে বাধ্য হন। পুরুষের বিকৃত যৌন ক্ষুধা মেটাতে নারীদের বাধ্য করা হয়। বহু বিবাহ সেখানে বৈধ। একসঙ্গে বহু পত্নীর সঙ্গলাভের আনন্দ সৌদি পুরুষরা উপভোগ করেন বিকৃত উল্লাসে। বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী গৃহ কাজে সহায়তার জন্য সৌদি আরব যান, তাদের বেশিরভাগই কার্যত যৌনদাসী হিসেবে সৌদি পুরুষের ভোগলিপ্সা পূরণে বাধ্য হন। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করার সুযোগ তাদের থাকে না। এই নারীদের নীরব কান্না কারও কানে পৌঁছে না। ভাগ্যান্বেষণে গিয়ে অসংখ্য বাংলাদেশি নারী চরম দুর্ভাগ্যকেই বরণ করতে বাধ্য হন। দিনের পর দিন নিষ্ঠুর যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেককেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। নাজমা সে রকমই এক ভাগ্য বিড়ম্বিত নারী।
এই যে নাজমাকে সৌদি আরব থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হলো এ দায় কি শুধু তার, তার স্বজন-পরিজনের? সমাজের, রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই? বাংলাদেশ সরকারের কোনো দায় নেই? সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা প্রায়ই শোনা যায়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় অথবা মিথ্যা অভিযোগে দেয়া হয় গুরুদণ্ড। নিজের দেশের নাগরিকদের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব আমাদের দূতাবাসের। কিন্তু সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা কি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন? যদি করেন তাহলে নাজমাকে লাশ হয়ে ফিরতে হলো কেন? বাংলাদেশেও একশ্রেণির অসৎ মানুষ খোঁজখবর না নিয়েই সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠিয়ে টাকা রোজগার করেন। এদের একটি চক্র আছে। এরা নিজেদের আশু লাভের জন্য কতো মানুষের যে স্থায়ী সর্বনাশ করছেন, তার হিসাব রাখারও কেউ নেই। সৌদি আরবে বাংলাদেশের নারী গৃহ শ্রমিকরা অমর্যাদাকর জীবনযাপন করেন এবং বেশির ক্ষেত্রেই যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হন। কাজেই সরকারের উচিত সম্মানের জীবিকার নিশ্চয়তা না করতে পারলে সৌদিতে নারী গৃহ শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা। পেটের ক্ষুধা দূর করার জন্য সৌদি আরব গিয়ে নারীরা নিগৃহীত হবে এবং পরিবারের প্রলম্বিত কান্নার কারণ হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। লেখক : কবি ও শিক্ষক