শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১১:২১ দুপুর
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১১:২১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গা নির্যাতন ও নির্বাসনের ২ বছর পূর্তি কাল

আসিফুজ্জামান পৃথিল : ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। কয়েকটি পুলিশ চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর বর্বর এক হামলা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাতমাদোও। হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগে, ভীত, আতঙ্কিত, স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত রোহিঙ্গারা আর স্বভূমে থাকার সাহস দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশ সীমান্তে ঢল নামে তাদের। বাংলাদেশও তাদের আশ্রয় দেয়ার এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। রোহিঙ্গা নির্যাতন ও নির্যাতনের দুই বছর পূর্তিতে আমরা জেনে নেবো এই দুই বছরের ঘটনার চালচিত্র।

২৫ আগস্ট ২০১৭,  বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) উত্তর রাখাইনের একটি সেনাঘাঁটি ও পুলিশের ৩০টি টহল চৌকিতে হামলা চালায়। দুই পক্ষের সংঘর্ষে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য ও প্রায় ৮০ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রাণ হারান। এই রাতেই পুলিশ সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হামলা চালায় বলে পরে রোহিঙ্গারা জানান। ২৬ আগস্ট, ২০১৭, রাখাইনের হাজার তিনেক রোহিঙ্গা নাফ নদী টপকে বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসে বলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক কমা-ার জানান। ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোর ২ হাজার ৬০০রও বেশি বাড়িঘর ধূলিস্মাৎ হয়ে যায় বলে দেশটির সরকার জানায়। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, উপগ্রহের ছবি ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের খবরের বরাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানকে জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তকিয় উদাহরণ বলে অভিহিত করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের নেতা অং সান সুচি রাখাইনে মানবাধিকার লংঘনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের’ অভিযোগ নিয়ে কিছু বলেননি।

১০ অক্টোবর, ২০১৭, ইয়াঙ্গুন স্টেডিয়ামে আন্ত:ধর্মীয় প্রার্থনার আয়োজন করেন সুচি; একইদিন ১১ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে বলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির বরাত দিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানায়। ১২ অক্টোবর, ২০১৭, মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্শালের সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাং রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের অধিবাসী নয় বলে মন্তব্য করেন। ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযানে সেনাসদস্যরা কোনো অপরাধ করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরুর কথা জানায় মিয়ানমার সেনাপ্রধানের কার্যালয়। ২ নভেম্বর, ২০১৭, সেনা অভিযানের পর রাখাইনে প্রথম সফরে সুচি জনগণের উদ্দেশ্যে ‘বিবাদে না জড়াতে’ অনুরোধ জানান। ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ইয়াঙ্গুনে একটি রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রণ জানিয়ে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিউ সোয়ে ও-কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ দুই সাংবাদিক তখন রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনাবাহিনীর হাতে ১০ রোহিঙ্গা হত্যাকা- নিয়ে তদন্ত করছিলেন। ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ইন দিনের একটি গণকবর থেকে অজ্ঞাত মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে বিবৃতি দেয় সেনাবাহিনী। ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭: যুক্তরাষ্ট্র ‘মানবাধিকার লংঘনের’ দায়ে মিয়ানমারের ১৩ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে; এদের মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অভিযান দেখভাল করা জেনারেলও আছেন। ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিচার পূর্ববর্তী শুনানি শুরু। সরকারি কৌঁসুলিরা ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ দুইজনের নামে অভিযোগ দায়েরের অনুমতি চান, এ আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে। একইদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ইন দিনে ১০ রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যায় তাদের কিছু সদস্যের সম্পৃক্ততার দায় স্বীকার করে।  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, মিয়ানমার অন্তত ৫৫টি রোহিঙ্গা গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে বলে উপগ্রহের ছবির বরাত দিয়ে জানায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আগস্টে সেনা অভিযানের পর থেকেই ওই গ্রামগুলো জনশূন্য ছিল। ১২ মার্চ, ২০১৮, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ও মসজিদ ছিল এমন এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঘাঁটি বানিয়েছে বলে জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

১১ এপ্রিল, ২০১৮, ইন দিনে ১০ রোহিঙ্গা হত্যায় জড়িত ৭ সেনাসদস্যকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। ৩০ জুলাই, ২০১৮, রাখাইনে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তদন্তে কমিশন গঠন করে মিয়ানমার। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, রয়টার্সের দুই সাংবাদিক দোষী সাব্যস্ত। দেয়া হয় ৭ বছরের কারাদ-। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ভিয়েতনামের হ্যানয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অন আসিয়ানে অং সান সুচি তার সরকার আরও ভালোভাবে রাখাইন পরিস্থিতি সামলাতে পারতো বলে স্বীকার করে নেন। ১৮ মার্চ, ২০১৯, ২০১৭ সালের অভিযানে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল কিনা তার তদন্তে সামরিক আদালত গঠনের কথা জানায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ৭ মে, ২০১৯, প্রেসিডেন্টের ক্ষমায় মুক্তি পান রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। ২৭ মে, ২০১৯, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র ইন দিনে গণহত্যায় কারাদ-িত ৭ সেনার আগাম মুক্তি অনুমোদিত হওয়ার কথা জানান।  ২০ আগস্ট, ২০১৯, নতুন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিলেও কেউ যেতে না চাওয়ায় তা ভেস্তে যায়।

এপি/এসবি

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়