জান্নাতুল পান্না: নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ, ফ্ল্যাট বিক্রিতে অনিয়ম, চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে আবাসন শিল্পে জড়িত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আর এসব অভিযোগের বেশিরভাগই করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন ১০৬- এ। একই বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ আসার পর এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে দুদক ।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, আবাসন খাতে সরকার স্বীকৃত একমাত্র সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) বলছে, ফ্ল্যাট হস্তান্তরসহ নানা সমস্যা নিয়ে রিহ্যাবে ৫০০ অভিযোগ জমা আছে। তবে এসব অভিযোগ বিপজ্জনক পর্যায়ে আছে বলে মনে করে না সংগঠনটি।
রিহ্যাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা এক হাজার ৫৪টি। এই সদস্যরা বছরে প্রায় ১১ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি করে থাকে।
নকশা বহির্ভূত ‘শীতল গ্র্যান্ড প্যালেস’
রাজধানীর বনশ্রীতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নকশা অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে ডেভেলপার কোম্পানি ‘শীতল প্রপার্টিজ লিমিটেড’। ‘শীতল গ্র্যান্ড প্যালেস’ নামে ওই বহুতল ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুদফা নোটিশও পাঠিয়েছে দুদক। তারপরও ভবন নির্মাণ বন্ধ না করায় গত ১৮ জুলাই সেখানে অভিযান চালায় দুদক।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফরোজা হক খানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এই অভিযান। পরে রাজউকের নকশা অমান্য করে ভবন নির্মাণের কারণে শেষবারের মতো চূড়ান্ত নোটিশ পাঠায় দুদক। একইসঙ্গে চূড়ান্ত নোটিশ অমান্য করলে রাজউকের জোন-৬ এর অথরাইজড অফিসারকে ভবনের নির্মিত অংশ উচ্ছেদের সুপারিশ করে দুদক টিম।
ভবন নির্মাণের তদারকিতে রাজউকের অনিয়ম
হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম গত ১৫ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অভিযানে চালায়। সেখানে ভবন নির্মাণের তদারকিতে থাকা রাজউকের অনিয়মের তথ্য মেলে। তাজমহল রোডে আবাসন প্রতিষ্ঠান ডি বিল্ডার্স অ্যান্ড প্রোপার্টিজ লিমিটেড রাজউকের বিধি লঙ্ঘন করে ওই বহুতল ভবন নির্মাণ করছে বলে অভিযান চলাকালে প্রমাণ পায় দুদক। এ সময় রাজউক জোন-৩ এর কর্মচারীরাও দুদক টিমের সঙ্গে ছিলেন।
এছাড়াও দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রে (হটলাইন-১০৬) বিধি লঙ্ঘন করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ করেন তিনজন ফ্ল্যাট মালিক। এরপর গত ২৬ মে নিউ বেইলি রোডে অভিযান চালিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ দেয় দুদক। এ সময় দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের সঙ্গে রাজউক জোন-৬ এর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
রাজউকের নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ ছাড়াও ফ্ল্যাট কেনা নিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। আর এসব অভিযোগের বিষয়ে রিহ্যাব সচেতন আছে বলে জানিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভুঁইয়া। তিনি জানান, আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তারা সেটা খতিয়ে দেখেন এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেন।
রিহ্যাব বলছে, ফ্ল্যাট কেনার পর সময়মতো বুঝে না পাওয়ার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি জমা পড়ে। সরেজমিনে এ তথ্যের সত্যতাও মেলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন অনেক কোম্পানি আছে, যারা ফ্ল্যাট বা বাণিজ্যিকভাবে ফ্লোর বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের পর উধাও হয়ে গেছে। কোম্পানি ও ব্যক্তির বিরুদ্ধেও এ ধরনের হয়রানির তথ্য পাওয়া যায়।
কিছু ডেভেলপার ভবনের শুধু কাঠামো তৈরি করে ভেতরের সব কাজ ক্রেতার ওপর চাপিয়ে দেন। মেয়াদ শেষে চুক্তি অনুসারে অন্যান্য সিভিল ওয়ার্ক, স্থাপনা যেমন- ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, সোলার প্যানেল, লিফট, ইন্টারকম স্থাপন না করে সটকে পড়ে। আর এক্ষেত্রে রিহ্যাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা অন্যান্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের তেমন কোনো সহযোগিতা পান না গ্রাহকরা। অথচ এ খাতে সরকারের রাজস্ব আয়ের জোগানদাতা ক্রেতারা, ডেভেলপাররা না।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়
আপনার মতামত লিখুন :