আরিফা রাখি : নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, ঢাকার বাড্ডাসহ সারাদেশে ছেলেধরা সন্দেহে গত কয়েক দিনে গণপিটুনিতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ (ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
তারা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ছেলেধরা কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার আগেই গণপিটুনির শিকার হচ্ছে মানুষ। কাউকে সন্দেহ হলেই গণপিটুনির মাধ্যমে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনায় যেকোনো নিরীহ মানুষও গণপিটুনির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন সমাজ। আবার গণপিটুনিতে অংশ নিয়ে নিরীহ মানুষ নিজের অজান্তেই মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন।
রোববার দেয়া বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সামাজিক অস্থিরতা হঠাৎ করেই যেন প্রবল রূপ ধারণ করেছে। পারিবারিক সামাজিক অবক্ষয়জনিত একের পর এক বীভৎস ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশ। হত্যা, ধর্ষণ, ইভটিজিং, আত্মহনন, গণপিটুনিতে মানুষ হত্যার মিছিলে বেরিয়ে পড়ছে সমাজের এবং নৈতিকতার বিপর্যয় এবং অধঃপতনের ভয়ানক চিত্র। প্রতিদিনই ঘটছে নানা অঘটন। সারাদেশে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও খুন হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এসব খুনের বেশিরভাগ ঘটছে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে।
তারা আরো বলেন, এ অবস্থায় মানুষ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন, সেজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে এখনই রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত। সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, গণপিটুনিতে অংশ নেওয়া মানুষটিও মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার জন্য। যেকোনো মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা একটি সামাজিক অপরাধ। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াও গর্হিত অপরাধ। এ জাতীয় অপরাধ যেন কেউ না করেন, সেজন্য এখনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
নেতারা আরো বলেন, মানুষ হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। গণপিটুনিতে অংশ নিয়ে মামলায় আসামি হওয়া ব্যক্তিকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করেননি। আর আদালতে তিনি যদি সেটা প্রমাণ করতে না পারেন, তবে তাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে। এ কারণেই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, মানুষ যেন হুজুগে আইন নিজের হাতে তুলে না নেন সে বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা। কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন মনে হলে মানুষ যেন তাকে ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেন। অথবা ধরার আগে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দেন, যেন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারে। এটা হলেই শুধু এ জাতীয় সন্দেহজনকভাবে গণপিটুনির হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতে পারেন।
গণমাধ্যমকেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তারাও সচেতনতা বাড়াতে সংবাদ প্রচার করতে পারে। সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে পারিবারিক বন্ধন জোরদারের বিকল্প নেই। ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি পরিবারের অভিভাবককে সন্তানের বিষয়ে আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। সম্পাদনা: অশোকেশ/সুতীর্থ
আপনার মতামত লিখুন :