কামরুল হাসান মামুন : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই ১৯৭০-এর নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলেন জিডিপির অন্ততপক্ষে ৪ ভাগ শিক্ষা খাতে দেয়া দরকার। তিনি বলেন ‘শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয় হিসাব ধরলে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ জিডিপির শতকরা ২ ভাগ।’ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত বরাদ্দের জাস্ট অর্ধেক বরাদ্দ দিয়ে এই সরকার নাকি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। ডা. দীপু মনির এসব কথায় যদি আবার প্রধানমন্ত্রী নাখোশ হয় তাই সঙ্গে কিছু যোগ করে বলেন, মোট ২৮টি মন্ত্রণালয় শিক্ষার প্রসারে কাজ করে।
সব মন্ত্রণালয়ের হিসাব ধরলে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ। কাজেই শিক্ষার বাজেটে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি। তবে গত ১০ বছরের তুলনায় শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কয়েকগুণ বেড়েছে। আসল কথা কি? আসল কথা হলো সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট জিডিপির ৩.৩ শতাংশ যার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ অন্য আরো ২৭টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন শিক্ষা সফর ও তাদের ট্রেনিং বাবত খরচও যুক্ত। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৪ হাজার কোটি টাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বরাদ্দও শিক্ষা খাতে জুড়ে দেয়া। এসব কিছু আমলে নিলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নিয়ে সরকারের একধরনের ভাঁওতাবাজি স্পষ্ট।
নানাভাবে বরাদ্দকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। তাছাড়া টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়ার ব্যাপারটিও একধরনের ধোঁকাবাজি। আমাদের জিডিপি বাড়ছে সঙ্গে ইনফ্লেশনও বাড়ছে এই দুই মেলালে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ তো স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। অর্থাৎ জিডিপির ২.২ শতাংশ বরাদ্দ যদি স্থির রাখি তাতেও বরাদ্দের অঙ্ক বাড়বে। কিন্তু সেটা কি সত্যিকারের বরাদ্দ বৃদ্ধি হলো? ইউনেস্কো স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে একটি দেশ উন্নত হতে চাইলে শিক্ষায় জিডিপির ন্যূনতম ৫.৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত।
সরকারের এই ভাঁওতাবাজির আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বরাদ্দ কখনোই শিক্ষা খাত থেকে হতে পারে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকে শিক্ষার সঙ্গে যোগ করে বেশি দেখানো অনৈতিক কাজ। দেশে প্রতিটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি আছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন আছে, আছে আরো নানা ফোরাম। অথচ কেউ এসব নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করা তো দূরে থাক কেন ভাঁওতাবাজি করা হচ্ছে সেটা নিয়েও একদম সুনসান চুপ। এখন বুঝতে পারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি ঢোকাতে পারলে সরকারের কতো লাভ। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :