শিরোনাম
◈ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ মে, ২০১৯, ১১:৩৩ দুপুর
আপডেট : ২৯ মে, ২০১৯, ১১:৩৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দের ২০% অপচয়

নিউজ ডেস্ক : দরিদ্র মানুষের আয় বাড়িয়ে দারিদ্র্য নিরসন ও সমাজে সমতা আনার লক্ষ্যে প্রতি বছরই বাজেটে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ থাকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যদিও এ অর্থের ২০ শতাংশই অপচয় (লিকেজ) হয়।  বণিক বার্তা

সম্প্রতি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এ খাতের অর্থ অপচয়ের তিনটি কারণ তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণগুলো হলো ভুতুড়ে সুবিধাভোগী নির্বাচন, সুবিধার দ্বৈততা এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি।

দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। আগামী পাঁচ বছরে এ খাতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এর প্রতিফলন ঘটতে পারে। কিন্তু অপচয়ের কারণগুলো বন্ধ করা না গেলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে এ কর্মসূচির সুফল পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের আগামী বাজেটেও সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বরাদ্দ বৃদ্ধির আগে অগ্রাধিকার দিয়ে অপচয় বন্ধ করতে হবে। অপচয় বন্ধ করলেও সামাজিক নিরাপত্তার আওতা আরো বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে দারিদ্র্য নিরসনও সম্ভব হবে অতিরিক্ত খরচ না করে। অপচয় কমাতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

সামাজিক সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের সমন্বিত ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে ১০ বছর মেয়াদি জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র (এনএসএসএস) গ্রহণ করে সরকার। ২১টি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর এ কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করছে, যাদের আওতায় রয়েছে ৯৯টি কর্মসূচি। কিন্তু এসব কর্মসূচির অর্থ বা সুবিধা সব দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করলেও তাদের মাত্র ২৯ শতাংশ এ সুবিধা পাচ্ছে। বাকি ৭১ শতাংশ দরিদ্র মানুষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে রয়ে গেছে।

এদিকে শক্তিশালী তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি না থাকায় একই ব্যক্তি একাধিক কর্মসূচি থেকে সুবিধা পাচ্ছে। সুবিধাভোগী নির্বাচনেও রয়েছে ভুলত্রুটি। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবে বিতর্কিত হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বলছে, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার আওতাভুক্ত ১৮ শতাংশ পরিবারই ছিল সচ্ছল শ্রেণীভুক্ত। অথচ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল সব ধরনের কর্মসূচির আওতার বাইরে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার ১৯৯৬ সালেই প্রথম বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র গ্রহণ করা হয়। এটাই প্রমাণ করে যে সরকারের দারিদ্র্য বিমোচনে সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি কিংবা ত্রুটি নেই। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছু প্রাসঙ্গিকতা আসতে পারে। সেজন্য সরকার থেকে ব্যক্তিপর্যায়ের সরাসরি ভাতা প্রদান ব্যবস্থা (জি২পি পেমেন্ট সিস্টেম) জোরদার করা হচ্ছে। এ ধরনের ব্যবস্থা কেবল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিই নিশ্চিত করবে না, রোধ করবে অর্থের অপচয় ও সুবিধার দ্বৈততা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে সামাজিক সুরক্ষাভুক্ত বিভিন্ন ভাতার হার ও পরিধির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৭৩ দশমিক ২ কোটি টাকা। এটি বেড়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৪ হাজার ২০৬ কোটি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করত, ২০১৬ সালে এ হার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দ্বৈততা পরিহার ও স্বচ্ছতা আনয়ন ও লক্ষ্যাভিমুখী করার উদ্দেশ্যে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের সুবিধাভোগীদের তথ্য নিয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ কার্যক্রমের আওতাধীন অর্ধকোটি সুবিধাভোগীকে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সুবিধাভোগীরা নিজেদের বাড়িতে বসে নিজস্ব পছন্দের ব্যাংক হিসাব/মোবাইল হিসাবে পেয়ে থাকেন।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দুস্থ, দরিদ্র ও পশ্চাত্পদ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বয়স্ক ভাতা, সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, শিশু সুবিধা, শিশুদের বিদ্যালয় বৃত্তি এবং বিধবা-স্বামী নিগৃহীত-দুস্থ মহিলা ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিশেষ কর্মসূচি, যৌথ ঝুঁকি প্রশমন কর্মসূচি এবং ক্ষুদ্র কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার এ কৌশল বাস্তবায়ন করছে।

 

 

 

 

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়