শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ২৮ মে, ২০১৯, ০৬:২২ সকাল
আপডেট : ২৮ মে, ২০১৯, ০৬:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তদবির ছাড়া হাইকোর্টে মামলার ফাইল নড়ে না

জাবের হোসেন : হাইকোর্টে আসা বিচারপ্রার্থীদের কাছে তদবির শব্দটি কমবেশি পরিচিত। আর এই তদবির হলো আর্থিক লেনদেন বা ঘুষ। তদবির করা না গেলে মামলা মাসের পর মাস শুনানির অপেক্ষায় পড়ে থাকে। কখনও নথি পাওয়া যায় না, আদেশের কপি পেতে সপ্তাহ-মাস কেটে যায়, অথবা প্রতিটি পদক্ষেপে বিচারপ্রার্থীকে অযথা হয়রানির শিকার হতে হয়। বিচারপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলা ট্রিবিউন

আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তদবির নামক দুর্নীতি অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়েও উঠেছে। বিচারপ্রার্থীরাও অবগত তদবির না করলে মামলার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আদালত ব্যবস্থাপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া এমন অনৈতিক লেনদেনের কারণে খোদ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমও ক্ষুব্ধ। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, এভাবে বিচার বিভাগ চলতে থাকলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে।

প্রাথমিক শুনানি ও মুলতবি শুনানির জন্য মামলা কার্যতালিকায় তোলা, অথবা অন্য যে কারণেই হোক মেনশন স্লিপ (স্লিপের মাধ্যমে মামলার বিষয়বস্তু আদালতে উত্থাপন) জমা দিলেই তবে মামলাটি সংশ্লিষ্ট কোর্টের কার্যতালিকায় আসে। সেক্ষেত্রে কোনও মামলায় রুল শুনানির জন্য দেখা যায় মামলাটি কার্যতালিকায় ৫০০ নম্বরে রাখা হয়েছে। তখন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বা তার বেশি অংকের টাকা দিয়ে তদবির করলে মামলাটি কার্যতালিকার সিরিয়ালে সামনের দিকে নিয়ে আসা হয়। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে মামলার ফাইল প্রস্তুত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না, বরং সেকশনে রেকর্ড রেঞ্জারকে টাকা দিলে তারা মামলার নথিতে সিল দেন এবং তা শুনানির জন্য প্রস্তুত করে থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন মামলা করতে গেলে আইনজীবীর ফি ছাড়াও প্রথমে স্ট্যাম্প দিয়ে কোর্ট ফি এন্ট্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফির অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। এরপর মামলার নম্বর দেওয়া হয়। সেখানেও টাকা দিয়ে কাজ করাতে হবে। নম্বর পাওয়ার পর নথিটি এফিডেভিট কমিশনারের কাছে যায়। সেখানে তদবির করতে হয়। এ পর্যায়ে এফিডেভিট কমিশনার মামলার ডিপোনেন্টকে (হলফকারী) খোঁজেন। আগে ডিপোনেন্টকে আসতে হতো না, এখন আসতে হয়। তাই আগে এফিডেভিট কমিশনারকে ৫০-১০০ টাকা দিয়ে কাজ করানো গেলেও এখন ৩০০-৩৫০ টাকার নিচে কাজ হয় না। আবার এফিডেভিট কমিশনারের কাছে কোনও কারণে ডিপোনেন্ট না আসলে, মামলা প্রতি তাকে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। না দিলে দীর্ঘদিনেও কাজটি সম্পন্ন হবে না।

কোনও মামলায় কোর্ট কোনও আদেশ দেওয়ার পর বেঞ্চ অফিসার (বিও)তা টাইপ করেন। কিন্তু, তদবির ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ টাইপ হয় না এবং সিরিয়াল অনুযায়ী ফাইলও নামে না। তাই আদেশের বিষয়ে সবসময়ই বিওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। এরপর টাইপ হয়ে আদেশটি জমাদারের কাছে যায়।

আদেশটি জমাদারের মাধ্যমে বিচারপতির কাছে গেলে তারা স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর শেষে আদেশটি বেঞ্চ অফিসারের কাছে আসে এবং কোর্টের পিয়ন সেই আদেশনামার জন্য ২০০-৩০০ টাকা বকশিস দাবি করে থাকেন,যেন এটা তার প্রাপ্য।
আবার সেকশনে যাওয়ার পর স্বাক্ষরিত আদেশটি একজন কর্মকর্তা টাইপ করেন এবং তার সঙ্গে থেকে আরেকজন তা মিলিয়ে দেখেন। এখানে মামলাটির ফাইল একাধিক টেবিল ঘুরে ডেসপাস সেকশনে যায়। সেক্ষেত্রে একটি টেবিল থেকে আরেকটি টেবিলে মামলার ফাইল স্থানান্তর করতেও বিচারপ্রার্থীকে তদবির নামের অনৈতিক লেনদেনে জড়াতে হয়। সবশেষে ডেসপাস সেকশনে টাকা দিলেই তবে মামলার আদেশের কপি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়। অন্যথায় আদেশটি নড়েচড়ে না পড়েই থাকে।

কোনও আসামির জামিনের আদেশ হওয়ার পর তদবির ছাড়া কখনোই মামলার নথি সংশ্লিষ্টদের হাতে যায় না। তাই কারও জামিনের আদেশ হওয়ার পরও যদি তদবির করা না হয়, তাহলে বছরের পর বছর মামলার ফাইল আদালতেই পড়ে থাকে, জামিনের আদেশটি আর সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, কোনও মামলায় আদেশের পর বিচারপ্রার্থী বা তার আইনজীবীরা যদি সংশ্লিষ্ট কোর্টের সেকশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ ব্যয় বা তদবি’ না করেন, তবে ফাইলটি যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই থেকে যায়। বছরের পর বছর কেটে গেলেও তদবির ব্যতীত মামলার আদেশ বিচারপ্রার্থীদের কাছে যায় না। অভিযোগ রয়েছে,এমনকি হাইকোর্ট কাউকে জামিনাদেশ অথবা খালাসের আদেশ দিলেও প্রয়োজনীয় তদবি’ না করলে বিচারপ্রার্থীকে দিনের পর দিন কারাগারেই থাকতে হবে। দেখা গেছে,অভাবগ্রস্ত গরিব-অসহায় বিচারপ্রার্থীদেরকেই এ ধরনের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়,যার অসংখ্য নজির আগে দেখা গেছে।

কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনজীবীদের সঙ্গে হাইকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে একটি মামলায় কত টাকা পর্যন্ত তদবির করতে হবে। আবার মামলার ধরন বুঝেও এই লেনদেন বেশি-কম হয়ে থাকে। তবে অন্ততপক্ষে একটি রিট মামলা শুধু ফাইল করতে গেলেই ১২০০ টাকা, জামিনের আদেশের কপি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন টেবিল ঘুরে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা এবং অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে শুনানি থেকে শুরু করে আদেশের কপি হাতে পাওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে চার হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা তদবিরে খরচ করতে হয়। সম্পাদনা- কায়কোবাদ মিলন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়