জান্নাতুন নাঈম প্রীতি : একটা বড়সড় ধাক্কা খেলাম। দেখলাম অসহায় এক বাবা দুই শিশুকন্যার লিচু খাওয়ার আবদার না মেটাতে পেরে ক্ষোভে হতাশায় দুই কন্যাকেই মেরে ফেলেছেন! সেই বাবার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। এটা দেখেই মনে পড়লো বুলবুলের মৃত্যুর পর নজরুল দাফন করার টাকা না পেয়ে প্রকাশকের কাছে কয়েক টাকা চেয়ে পুত্রের লাশ রেখেই কাঁদতে কাঁদতে লিখেছিলেন-ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি/করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঁঝের ঝরা ফুলগুলি... যে দেশের জাতীয় কবি ছেলের মৃত্যুর পরে গান লিখে টাকা চেয়ে প্রকাশকের কাছে চিঠি পাঠায়, সেই দেশের লোকের কাছে শিল্প-সাহিত্যের দাম টাকার চেয়ে বেশি না এটা বলে দিতে হয় না। এদেশে বড়লোক বলতে বড় কবি, বড় লেখক, বড় শিল্পী বোঝায় না, বোঝায় বড় ধরনের ধান্ধাবাজদের। দেশের টাকা লুটপাট করবে, মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বিএমডব্লিউ কিনবে, বাঙালির হিসাবে তবেই না বড়লোক! সব বাবা নজরুল নয়।
কেউ কন্যাদের না খাওয়াতে পেরে মেরে ফেলেন। কেউ সুপারশপে গিয়ে সন্তানের জন্য গুঁড়া দুধ চুরি করেন, কেউ অপারগ হয়ে পুত্রের লাশের বোঝা নিয়ে লিখতে বসেন। দুইটাই সংগ্রাম, কিন্তু আলাদা নয়! দারিদ্র্য সব সংগ্রামকে এক সুতায় গেঁথে রাখে। কেউ কন্যাদের মেরে ফেলে সংগ্রামের ইতি টানেন, কেউ পুত্রের লাশের বোঝা নিয়ে টাকা চেয়ে কবিতা লেখেন! নজরুলেরা কবিতা লিখে দারিদ্র্যকে মহান বলেন ঠিকই, কিন্তু সব বাবা মহান এই দারিদ্র্যকে জয় করতে পারেন না। কন্যাদের চাওয়া লিচুর কাছে কেউ কেউ হেরে যান। সন্তানের ক্ষুধার কাছে কেউ কেউ পরাজয় মেনে প্রমাণ করে যান... দারিদ্র্য কবিতার মতো মহান নয়, দারিদ্র্য সবসময় অভাবের মতো কঠিন হয়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :