অশোকেশ রায়: প্রথমবারের মতো চালু করা ‘প্রফেসর এস এম ফরহাদ স্কলারশিপ’ পাচ্ছে ফরিদপুরের দুই কৃতী শিক্ষার্থী অথৈ সাহা অভি এবং অর্পিতা দেবী সূচি। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় তারা দুজন ফরিদপুর জেলায় যথাক্রমে ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির ছাত্র অথৈ সাহা অভির এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বর ১০৩৭। সে ৯৩ দশমিক ৪২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। অন্যদিকে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী অর্পিতা দেবী সূচির এসএসসিতে মোট প্রাপ্ত নম্বর ১০২৭। সে ৯২ দশমিক ৫২ শতাংশ নম্বর অর্জন করেছে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর কার্যালয়ে বৃত্তিপ্রাপ্ত এই দুই শিক্ষার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও হামীম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ তার শিক্ষক প্রফেসর এস এম ফরহাদের নামে এ বৃত্তি চালু করেছেন। ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর এস এম ফরহাদের নামে এ বৃত্তি চালু করা হয়। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান রাজেন্দ্র কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানে রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক দুই জনপ্রিয় শিক্ষক প্রফেসর এস এম ফরহাদ ও ড. রানা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে এ বৃত্তির পটভূমি তুলে ধরেন রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক শিক্ষক ড. রানা চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সমাজসেবা সব ক্ষেত্রেই রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থীরা অগ্রগামী। অনেক ক্ষেত্রে তারাই পথিকৃৎ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া ব্যক্তিরা এ কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮১-৮২ সালের একটি ব্যাচ থেকেই ছয়জন শিক্ষার্থী পিএইচডি করেছেন।
তিনি তার সহকর্মী এস এম ফরহাদের নামে চালু হওয়া এই বৃত্তির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘শিল্পপতি এ কে আজাদ তার শিক্ষকের নামে এই বৃত্তি চালু করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। অনেকে নিজের নামে, বাবার নামে অথবা পরিবারের নামে বৃত্তি চালু করেন। কিন্তু নিজের শিক্ষকের নামে বৃত্তি চালুর এই অনন্য উদাহরণ আর খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা জানি না। এটা শিক্ষক হিসেবে আমাদের গর্ব।’
তিনি জানান, এই বৃত্তি চালুর জন্য এ কে আজাদ ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। ফরিদপুর জেলা থেকে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে এসএসসি পাস করা একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী প্রতি বছর এ বৃত্তি পাবেন।
অনুষ্ঠানে বৃত্তিপ্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীর নাম ঘোষণা করেন প্রফেসর এস এম ফরহাদ স্কলারশিপ পরিচালনা কমিটির দুই সদস্য ইঞ্জিনিয়ার সাঈদুর রহমান ও রেজাউল হায়দার।
নিজের নামে বৃত্তি চালুর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রফেসর এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমার ছাত্র আমার জন্য যা করেছেন, তা অভাবনীয়, অবিশ^াস্য। আমি মুগ্ধ। তিনি এতোটা করবেন, ভাবিনি। নীরবতা আর অশ্রæ নিয়েই আমি তা বরণ করেছি। এতো সম্মান আমি কখনো পাইনি। সার্থক জনম আমার। এ কে আজাদ জনহিতকর আরও অনেক কাজে জড়িত। তার জন্য শুভ কামনা আর দোয়া।’
অনুষ্ঠানে এ কে আজাদ রাজেন্দ্র কলেজে তার ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘অধ্যাপক এস এম ফরহাদ রাজেন্দ্র কলেজের অন্যতম স্মার্ট শিক্ষক ছিলেন। এই শিক্ষক দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং চতুর্থ স্টেজে আছেন, সেটি আমার জানা ছিল না। সম্প্রতি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি তা জানতে পারি এবং এই শিক্ষকের নামে স্কলারশিপ চালুর সিদ্ধান্ত নেই।’
তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। ভবিষ্যতে ফরিদপুরের শত শত মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ারও ইচ্ছা পোষণ করি।’
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শারফুদ্দিন আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার সাঈদুর রহমান, রেজাউল হায়দার, জিয়াউল আহসান মিঠু, ফরিদা বেগম, ডা. মো. আবুল হাশেম এবং প্রফেসর এস এম ফরহাদেও ছেলে এস এম ফয়সাল। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তরুণ চক্রবর্তী ফিজুও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রফেসর এস এম ফরহাদের হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন এ কে আজাদ।