মাসুদ রানা : বাঙালি মার্কসবাদীরা শ্রেণি-সংগ্রামের তত্ত্ব দিয়ে সমাজকে যে প্রকারে বিভক্তকরণ ও নামকরণের মাধ্যমে শত্রু-মিত্র নির্ণয় করে, আমার ধারণা, তা এ জাতির দরিদ্র ও শোষিত শ্রেণির লোকদের কাছে আদৌ বোধগম্য নয়। মার্কসবাদীরা যে ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’ স্লোগান দিয়ে মুখে ফেনা তোলে, তো ‘মজদুর’ শব্দটিই যে বাঙালি সাধারণ্যে বোধগম্য নয়, সে বোধ কি তাদের আছে?
আমার ধারণা, মার্কসবাদীদের মুখে দিনে-রাতে উচ্চারিত কেতাবি ‘সর্বহারা’ নামটি খোদ সর্বহারার কাছেও বোধ্যগম্য নয়। আর ‘বুর্জোয়া’ বোঝার তো বহু দূরের কথা! তো, মার্কসবাদীরা যে বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে সর্বহারা শ্রেণির বিপ্লবের কথা প্রচার করে, সর্বহারা শ্রেণির লোকেরা কি জানে যে তারা ‘সর্বহারা’ এবং তাদের যারা শোষণ করে, তারা ‘বুর্জোয়া’? বাংলাদেশের রাস্তা-ঘাটে, নগরে-বন্দরে, হাটে-বাজারে ও ক্ষেতে-খামারে যে লাখ লাখ শোষিত দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ তাদের জিজ্ঞেস করে দু’টি প্রশ্ন করুন : ১. ভাই আপনি কি ‘সর্বহারা’ বা ‘মজদুর’? ২. আপনি কি কোনো ‘বুর্জোয়া’ চিনেন? আমার ধারণা আছে এর উত্তর কী হতে পারে।
আমি আশির দশকে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রচুর শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমি বোঝার চেষ্টা করেছি, তাদের উদ্দেশে যা বলা হয়, তার কতোখানি তাদের বোধগম্য। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের মার্কসবাদীদের ব্যবহৃত চাবি-শব্দের অধিকাংশই তার বোঝেন না। কিন্তু লক্ষ্য করেছি তাদের কথা যে মানুষ বুঝতে পারে না, এ বিষয়ে মার্কসবাদীরা নির্বিকার। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন হতে পারে : যাদের জন্যে যাদের নিয়ে যাদের বিপ্লব করবেন, তারা যদি আপনাদের কথাই না বোঝে, বিপ্লবটা কি আকাশ থেকে পড়বে? ফেসবুক থেকে