অসীম সাহা : ‘বাঘে ছুঁলে এক ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা কথাটা তা হলে সত্যি? হঠাৎ পুলিশ ধর্মরক্ষার জন্য জেহাদে নেমে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে! দেশে হিন্দুধর্ম, ক্রিস্টানধর্ম ও বৌদ্ধধর্মকে তথাকথিত হুজুররা ক্রমাগত অপমান ও লাঞ্ছিত করছে, অসভ্য ও অশ্লীল গালিতে জেরবার করছে, মন্দির, মসজিদ ও প্যাগোডায় হামলা করছে, সরকারি দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, তাদের বাড়িঘর থেকে উৎখাত, এমনকি দেশ থেকে বিতাড়নেও বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে, সেখানে তো কই পুলিশের তেমন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না? ধর্মের কিংবা ধর্মপালনকারীদের অবমাননা নয়, শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলেই আঘাতকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে? যদি তাই হয়, তা হলে বরিশালে তো সবার আগে ফাদার সুব্রতকেই গ্রেফতার করা উচিত ছিলো।
তিনি শ্রীলংকার গির্জায় হামলার দিন বরিশালের গির্জায় নাচ-গান ও ফুর্তি করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকদের অনুভূতিতে আঘাত দেননি? হেনরি স্বপন তো সেই কথাটাই বলেছেন। তা হলে যিনি আঘাত দিলেন, তাকে গ্রেফতার না করে যিনি আঘাতের প্রতিবাদ করলেন, তাকেই পুলিশ গ্রেফতার করলো? এটা কেমন বিচার? আমরা বুঝতে অক্ষম, ফাদার সুব্রতর অনুভূতিতের কেন আঘাত লাগলো? হেনরি স্বপন তো তার লেখার কোথাও খ্রিস্টানধর্মকে আঘাত করেননি; বরং খিস্টানধর্মের অনুসারী হিসেবে ফাদার সুব্রত খ্রিস্টানধর্মের অনুসারীদের পাশে না থেকে তাদের অনুভূতিতেই আঘাত দেয়ার প্রতিবাদ করেছেন। তা হলে হেনরি স্বপনের অপরাধটা কোথায়? আসলে একজন নিরীহ কবিকে গ্রেফতার করা যতো সহজ, একজন ফাদারকে তা নয়। এটা বরিশাল প্রশাসন ও পুলিশ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
তবে পুলিশ কাদের ইশারায় একজন নিরীহ কবিকে গ্রেফতার করে নিয়ে কারাগারেও নিক্ষেপ করলো, সেটা আমাদের মতো মূর্খদের পক্ষেও বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। পুলিশ যে তৎপরতার সঙ্গে স্বপনকে গ্রেফতার করেছে, সেই তৎপরতা যদি সর্বক্ষেত্রে দেখতাম, তা হলে তাদের বাহ্বা দিতে পারতাম। কিন্তু অন্যক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা কী? এ-পর্যন্ত অন্য ধর্মকে অবমাননার জন্য পুলিশ কতোজনকে গ্রেফতার বা পুলিশি হেফাজতে নিয়েছেন? আমরা অন্ধ বলে আমাদের চোখে তা দৃশ্যমান হয়নি? তা হলে স্বপনেরটা দৃশ্যমান হলো কী করে? একজন ফাদার সম্পর্কে সত্য কথা বলায় একজন নিরীহ কবি হেনরি স্বপনকে কী অবলীলায় পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে কারাগারেও নিক্ষেপ করলো! যে পুলিশ নুসরাতকে ধর্ষণের জন্য দায়ী, যে পুলিশ নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার পরও বড় কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি, যে পুলিশ চাঁদাবাজি থেকে নানা অপকর্মে জড়িত, সেখানে হেনরি স্বপনের মতো এমন নম্র, ভদ্র ও বিবেদিতপ্রাণ কবিকে সামান্য কারণে গ্রেফতার করে আমাদের কী বোঝাতে চাইছেন পুলিশ? তারা ধর্মনিরপেক্ষ? পুলিশের চেয়ে কবিরা কি মূর্খ? পুলিশ প্রশাসনকে ভুলে গেলে চলবে না, কবিকে নাজেহাল করে পৃথিবীতে কোনো সরকার কিংবা প্রশাসন টিকতে পারেনি।
সকলকে বুঝতে হবে, অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা বরিশালের কিছু আমলার নির্দেশে এই কুকর্মটি করেছেন! আসলে প্রশাসনের মধ্যে কিছু বিভীষণ ঘাপটি মেরে থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডোবানোর জন্য যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, এটি তারই আলামতমাত্র। আমি নিশ্চিত, আমাদের প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখনো ব্যাপারটা জানেন না। জানলে নিশ্চয়ই বরিশাল পুলিশ এবং প্রশাসনের কপালে দুঃখ লেখা হয়ে যাবে। আমরা তার অপেক্ষায় রইলাম। আমি আমাদের সকল কবি, লেখক ও বুদ্ধিজীবীকে এই অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাই, যাতে অবিলম্বে বিনাশর্তে কবি হেনরি স্বপনকে মুক্তি দেয়া হয়!
লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়
আপনার মতামত লিখুন :