মঞ্জুরুল আলম পান্না
তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের আতঙ্ক ঘুরে ফিরেই প্রকট হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তর কোরিয়ার য়ুযুদ্ধ থেকে তৃতীয় ব্শি^যুদ্ধের আশঙ্কা জেগে উঠছিলো অনেকের বিশ্লেষণে। কিন্তু সবাইকে বোকা বানিয়ে সেই আশঙ্কায় পানি ঢালেন ট্রাম্প এবং কিম তাদের দুজনের অভাবনীয় সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেন তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ সংঘটিত হবে তেলকে কেন্দ্র করে। আবার অনেকের মতে, সর্বনাশী এই যুদ্ধ সংঘটিত হবে পানির হিস্যাকে কেন্দ্র করে। পাশের দশকে বৃটেনের বিখ্যাত এক ইতিহাসবিদ টয়েনবি তার এক বইয়ে লিখেছিলেন, ‘পরবর্তী শতাব্দীর যুদ্ধ কমিউনিস্ট ও পুঁজিবাদী শক্তিগুলোর মধ্যে ঘটবে না। বর তা ঘটবে খ্রিস্টান ও মুসলমান শক্তিগুলোর মধ্যে’। তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ আদৌ ঘটবে কিনা, অথবা ঘটলেও তার পটভূমি কী হবে তা নিয়ে অনেক ধরণের বিশ্লেষণ-তর্ক-বিতর্ক চলতে পারে। তবে ধর্মকে সেই যুদ্ধের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহারের জন্য পশ্চিমা শক্তির চেষ্টা যে অবিরাম তা আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষেরা অনুমাণ করতে পারে। এই প্লাটফর্ম তৈরির বীজ বোপন হয়েছে আজ থেকে আরও প্রায় সাত দশক আগে থেকেই। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে মিত্র শক্তির নেতৃত্বে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হ্যারী এস ট্রুম্যান এর সূচনা করেন। তার প্রত্যক্ষ ভূমিকাতে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখ-কে দ্বিখ-িত করে ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়া হয়। আরব প্যালেস্টাইনে তৈরি হয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। সেই থেকে বিশ^ রাজনীতিতে নতুন রূপ পায় ধর্মীয় উন্মাদনা। ইসরায়েলই আজ যুদ্ধাস্ত্র তৈরির অন্যতম প্রধান দেশ। মার্কিন রাজনীতিতেও নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে এই ইসরায়েল। মার্কিন নির্বাচনগুলোর ফলাফল নির্ধারন করছে এই অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোই।
নব্বইয়ের দশক থেকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ আর অস্ত্র ব্যবসার বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে একে একে তালেবান, আল-কায়েদা কিংবা আইএস’এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোর জন্ম কীভাবে হয়েছে তা এখন আর কারোর অজনা নয়। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাদের অন্যতম মূল টার্গেট বিশ^ব্যাপী ইসলামের প্রতি মানুষের হিংসা এবং বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলার চিত্রপটে হাজির করার চেষ্টা চলে কথিত ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোকে। ২১ এপ্রিল রবিবার শ্রীলংকায় সিরিজ বোমা হামলায় শতশত মানুষের প্রাণহানীর রোমহর্ষক ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংঘাত কবলিত শ্রীলংকায় এমন ভয়াবহ ঘটনার যখন কূল কিনারা করতে পারছিলেন না কেউ, তখন রাশিয়ার নিউজ এজেন্সি ‘তাস’ জানায় এই হামলার দায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে ‘জামাত আল তাওহীদ আল ওতানিয়া’ নামের একটি সংগঠন। রাশিয়ার ওই নিউজ এজেন্সি আবার এ খবর জানিয়েছে ‘আলা আরাবিয়া’ টিভির বরাত দিয়ে, যেখানে দায় স্বীকার করা ওই সংগঠন সম্পর্কে আর কোন কথাই বলা হয়নি। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের আজীবনের মিত্র সৌদি আরবের ‘আল আরাবিয়া টিভি’ গড়ে ওঠে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘আল জাজিরা’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে।
২৩ এপিল ২০১৯ পর্যন্ত উইকিপিডিয়ায় বিশে^র ২১০টি জঙ্গি বা সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম লক্ষ করলাম, যার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া সবই কথিত ইসলামী গ্রুপের। এসব সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের সরকার কর্তৃক চিহ্নিত বলে উল্লেখ করা রয়েছে উইকিপিডিয়ায়। মজার কথা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে ‘জামাত আল তাওহীদ আল ওতানিয়া’ নামের কোনো সংগঠন খুঁজে পাওয়া যায়নি। খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে- অস্তি¡হীন এমন একটি সংগঠনের পক্ষে শ্রীলংকার অতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো কীভাবে সম্ভব! যুক্তরাষ্ট্রের করিৎকর্মা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হয়তো খুব শিগগির এই নামের কোনো অদৃশ্য ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্তাব্যক্তির ভিডিও বার্তা ছাড়বে বিশ^বাসীর সামনে। সে পর্যন্ত আমাদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে বৈকি। তবে যেটিই হোক তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের জন্য ইতিহাসবিদ টয়েনবি’র কথা যেন আমার কাছে অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় লেখক : সাংবাদিক