আফসানা বেগম : ওয়াসার ৬২ শতাংশ গ্রাহক দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার। তাছাড়া, দুষিত পানি ফুটিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত করতে গিয়ে ভোক্তা প্রতি বছর সাড়ে ছত্রিশ কোটির বেশি কিউবিক মিটার গ্যাস পুড়িয়ে ফেলেন যার মূল্য তিনশ বত্রিশ কোটি টাকারও বেশি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল)।
আসলে ক্ষতি কি কেবল এটুকুই? ধরুন, ওই গ্যাস শিল্প কারখানায় সরবরাহ করলে তা দিয়ে যে দ্রব্য প্রস্তুত করা যেত, তার ক্ষতি। হয়তো মিরপুরবাসীর মতো অনেককে গ্যাসের অভাবে থাকতে হতো না, তাই তাদের কেনা খাবার বা এলপি গ্যাসের মূল্যের ক্ষতি। এই পরিমাণ গ্যাস পুড়িয়ে সারা শহরে বাড়িঘর উত্তপ্ত করে ফেলার জন্য যে বাড়তি ফ্যান আর এসি চালাতে হচ্ছে তার জন্য বিদ্যুতের ক্ষতি।
ওদিকে, তিতাস গ্যাস বাইশ রকমভাবে দুর্নীতি করে মানুষের টাকা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খসাতে অভ্যস্ত (দুর্নীতি দমন কমিশন)। তাদের জন্য মোটা টাকার ঘুষ, অনৈতিক বা মিটারবিহীন সংযোগ, ফ্যাক্টরিকে বাসাবাড়ির হারে সংযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে গ্যাসের প্রেশার কমিয়ে রাখা কিংবা ধরুন, মিটার ছাড়াই সংযোগ বা ভৌতিক বিলের ঝামেলা একেবারে ডালভাত। এখন কথা হলো, ওই যে পানি ফুটিয়ে তিনশ বত্রিশ কোটি টাকার গ্যাস পোড়ানো হলো, তার পেছনে এইসমস্ত বাইশ রকমের কাঠ-খড় পোড়ানোর ক্ষতিও তো আছে।
গ্যাসের কথা বাদ। ওয়াসার কানেকশন নিতে, পাইপের ময়লা পরিষ্কার করতে বা ভৌতিক বিলের হাত থেকে বাঁচতে যে পরিমাণ ঘুষ দরকার পড়ে, তার ক্ষতি। দিনের পর দিন কম প্রেশারের পানি টেনে বাড়িতে নিতে বিদ্যুতের ক্ষতি। ফোটানোর পরেও যেহেতু শতভাগ শুদ্ধ হয় না তাই পানিবাহিত রোগ, যেমন, ডাইরিয়া, কলেরা, জন্ডিজ কি চর্মরোগ হলে ডাক্তার আর ওষুধের পেছনে খরচের ক্ষতি। অসুস্থতায় কাজে যেতে না পারলে আয়-রোজগারের ক্ষতি। বাচ্চারা স্কুলে যেতে না-পারলে পরিশোধিত বেতনের ক্ষতি। ভয়ের চোটে কিছুদিন বোতলের পানি কিনে খাওয়ার ক্ষতি...।
থাক, তালিকা অনেক লম্বা হবে। দেশে যেহেতু বরাবর মানসিক উন্নয়নের চেয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রাধান্য পায় তাই ক্ষতির বেলায়ও মানসিক ক্ষতিকে এড়িয়ে আর্থিক ক্ষতি নিয়ে ভাবছিলাম। মানসিক ক্ষতির কথা আর নাইবা বললাম। ফেসবুক থেকে