শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ০৫:১৬ সকাল
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ০৫:১৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারের একশ দিন: আশা অনেক, আশঙ্কাও কম নয়

বিভুরঞ্জন সরকার: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার গঠনের পর একশ দিন পূর্ণ হলো আজ। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত সরকারের জন্য একশ দিন খুব বড় সময় নয়। সরকার একশ দিনের কোনো লক্ষ্য বা কর্মপরিকল্পনাও জাতির সামনে পেশ করেনি। সরকার গঠনের পর নতুন সরকারের জন্য দেশের মানুষও কিছুটা ‘হানিমুন পিরিয়ড' বরাদ্দ করে থাকে। তারপর শুরু হয় সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ। আমার ধারণা, আজকের পর থেকে সরকারের কাজকর্মের প্রতি মানুষের নজরদারি বাড়বে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এর কারণও আছে। প্রথমত, এই সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার চেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশে আর কেউ নেই। তিনি সৎ, পরিশ্রমী, অভিজ্ঞ, দূরদর্শী এবং কুশলী। তিনি বর্তমান বিশ্বে একজন সমাদৃত এবং প্রশংসিত রাষ্ট্রনায়ক। দ্বিতীয়ত, এই সরকারের একটি ধারাবাহিকতা আছে। বাংলাদেশে এর আগে আর কোনো সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তৃতীয়ত, দেশে নব্বইয়ের পর গণতান্ত্রিক শাসন ধারা শুরু হওয়ার পর এবারই প্রথম নির্ভেজাল আওয়ামী লীগের সরকার গঠিত হয়েছে।এটা জোড়াতালির সরকার নয়। এক মত, এক পথের সরকার। এগুলোই হলো বর্তমান সরকারের সবলতা।

তাহলে বর্তমান সরকারের দুর্বলতা কি? আমার বিবেচনায় একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতি সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ। গণতন্ত্রে সরকার এবং বিরোধী দল একে অপরের পরিপূরক হওয়ার কথা। সরকারের জন্য আরো একটি সমস্যা যে নির্বাচনে বিপুল জয় নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছে, সেই নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক প্রশ্ন আছে। নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনীহা-অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির স্বল্প হার নিশ্চয়ই উদ্বেগের কারণ। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। একশ দিনে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবলায় সরকারের সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উল্টো দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ– ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেও সরকার প্রশংসার বদলে সমালেচিত হয়েছে, সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অতিউৎসাহ ও বাড়াবাড়ির কারণে।

দেশে বিরোধী দল কার্যত নিষ্ক্রিয়। সরকারের কাজকর্মে কেউ বাধা দিচ্ছে না। দেশে হরতাল-ধর্মঘট নেই। সব কিছু সরকার এবং সরকারি দলের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে। তাই বিরোধী দলের ওপর কোনো বিষয়ে দায় চাপানোর কোনো সুযোগ এখন সরকারের নেই। এমন বাধাহীন পরিবেশে প্রথম একশ দিনে সরকার কি এমন ভালো কাজ করলো যা মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে বা হওয়ার মতো? নতুন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করে একটি চমক অবশ্যই দেখানো গেছে। দীর্ঘ দিনের মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু চমকের মন্ত্রীরা কেউ একশ দিনে কোনো বড় চমক দেখাতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। বরং দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কিংবা হস্তক্ষেপ লাগছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা কথা বলছেন কিন্তু দুর্নীতি কমেছে বা বন্ধ হয়েছে বলে মানুষ মনে করছে না। মানুষ কাজের গতি দেখতে পারছে না, বরং এক ধরনের স্থবিরতা যেন লক্ষ করা যাচ্ছে।

ভালো খবরের চেয়ে খারাপ খবর বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এটা কি প্রচার মাধ্যমের একদেশদর্শিতার কারণে? নাকি সত্যি ইতিবাচক কিছু ঘটছে না দেশে? সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। নারী নির্যাতনের ঘটনাও উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়েছে। বনানীর বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের প্রাণহানির ঘটনার পর জানা যাচ্ছে, রাজধানীর অনেক ভবনই যথাযথ অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়নি। সরকার আগের মেয়াদে কেন কোনো অনিয়মেরই বিরুদ্ধে শক্ত ব্যর্থ হয়েছে? আগে যা পারেনি, এবার তা পারবে তেমন কোনো লক্ষণ কি একশ দিনে দেখা গেলো?

নুসরাত নামের ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি সুশাসনের অভাবের বিষয়টি নগ্নভাবে সামনে এনেছে। এই ঘটনার সঙ্গে শাসক দলের স্থানীয় পর্যায়ের কারো কারো সম্পৃক্ততার বিষয়টি সরকারের জন্য নিশ্চয়ই বিব্রতকর।

একশ দিন একটি সরকারের মূল্যায়ন-পর্যালোচনার জন্য উল্লেখযোগ্য সময় নয়। কিন্তু একশ দিনেও যদি কোনো ‘ট্রেন্ড সেট' করা না যায় তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব আশাবাদী হওয়া যাবে কি? দেশে উন্নয়নমূলক কাজ অনেক হচ্ছে সন্দেহ নেই। সরকার অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু প্রকল্পগুলোর ধীর গতি মানুষকে আশাহত করে। কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায় না। সব প্রকল্পেই ব্যয় বাড়ে। কোনো কোনোটায় বাড়ে মানুষের ভোগান্তি। ফলে জনমনে দেখা দেয় অস্বস্তি। ঘন ঘন সরকার বদল হলে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। টানা সরকারে থেকেও যদি মানুষের আশা পূরণ না করা যায় তাহলে হতাশা বাড়ে।

একশ দিনের পর আমরা সরকারের গতিশীলতা দেখতে চাই। কাজ দেখতে চাই। স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মানুষের অনেক আবদার আছে কিন্তু যুক্তিহীন দাবি বুঝি একটিও নেই।

লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়