মাসুদ রানা
নগরীতে আগুন লাগলে যেমন দেবালয়ও রক্ষা পায় না, তেমনি একটি দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা যদি অগণতান্ত্রিক হয় এবং সেখানে যদি স্বৈরতন্ত্র রাজ করে, সেদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানইÑএমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদও স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা পায় না, যদি না সেখানে সচেতন সংগ্রাম ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র যেখানে স্বৈরতন্ত্রকবলিত এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচন জালিয়াতিতে সম্পন্ন হয়, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমনটি অসম্ভব বা নিকট-অসম্ভব। অধিকন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও অধিকাংশ শিক্ষক যেখানে স্বার্থের বশে স্বৈরতন্ত্রের আজ্ঞাবহ, সেখানে তারা স্বৈরশাসকের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েই নির্বাচনের পদ্ধতি ও ফল রচনা করবে।
স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে নির্লোভ, নির্ভীক ও সৃষ্টিশীল শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান ও অধিকারবোধ জাগিয়ে তুলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার প্রেরণা সৃষ্টি করতে হবে। এ প্রেরণা লাভ করতে হবে স্বদেশের ও বিশ্বের ইতিহাসে মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামী স্বপ্ন, কর্ম ও জীবন থেকে। আমরা যখন ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছিলাম এবং ডাকসুর নেতৃত্বে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের রক্তঝরা সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলাম, তখন আমাদের বোধের মধ্যে ছিলো ইতিহাসে প্রেরণা জাগানো মানুষের অমর বাণীÑযেমন কর্নেল তাহেরের ‘নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে বড় সম্পদ আর কিছু নেই’ কিংবা শিবদাস ঘোষের প্রকৃত যুবকের সংজ্ঞা :
‘প্রকৃত যুবক বলতে আমরা তাকেই বলি, যার মর্যাদাবোধ আছে, লড়ার তেজ আছে এবং যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার সাহস রাখে।’
সামাজিক বিজ্ঞান ও ইতিহাসবোধ থেকে আমি বিশ্বাস করি, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে রাজনীতির আকাশে প্রতিরোধের মেঘ, বিদ্যুৎ ও ঝড় জাগাবে ছাত্রছাত্রীরাই। ফেসবুক থেকে