শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ০৩ মার্চ, ২০১৯, ০৪:০৬ সকাল
আপডেট : ০৩ মার্চ, ২০১৯, ০৪:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নিজেকে জানা বা আত্মরূপ বিশ্লেষণ

সারওয়ার চৌধুরী : সক্রেটিস বলেছিলেন- ‘নো দাইসেলফ’, এ রকম একটা পাঠ সবখানে আছে। আসলে সক্রেটিস? না হেরাক্লিটাস? না থেইলস? না পিথাগোরাস? কে বলেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ডেলফির টেম্পল অব এপলো-তে সক্রেটিস বলেছিলেন বলে প্লোটো মানুষকে জানিয়েছিলেন। সক্রেটিসের কথাটা হলো-‘টু নো দাইসেলফ ইজ দ্য বিগিনিং অব উইজডম। এই এফোরিজমের মানে, নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে বিশেষ জ্ঞান পাওয়া শুরু হয়। এই নিজেকে জানা ব্যাপারটা কী?

এক ধরনের জানা এরকম যে, প্রত্যেকে তার মাঝে যেসব গুণ আছে, তার কাজ করার ক্ষমতা আছে তা বুঝে নিতে পারা। এই জানা এমন- আপনার ঘনিষ্ঠ কেউ, মা বাবাও নিশ্চিত কিছু বলতে পারবেন না আপনার নিজের এই জানা সম্পর্কে, যতটুকু আত্মবিশ্বাস নিয়ে আপনি আপনার নিজের কাজের ক্ষমতা বোঝেন, অন্য কেউ অতো নিশ্চিত হতে পারে না। মা জিজ্ঞেস করেন ছেলে বা মেয়েকে- ‘তুই পারবি কাজটা?’ আবার নিজে অধিক জানার পরেও সে যা দেখতে পারছে তার মাঝে আছে, মানে ক্ষমতার ব্যাপারটাই, মানে ষোলআনা নিশ্চিত হয়েও সে তার গুণের ব্যাপারে কখনও এমনও হয়, সে সন্দিহান, সে দ্বিধাতে, সে পারবে কিনা নিশ্চিত না। এখানে সে তার ‘চেনা-জানা’ নিজের ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য ষোলআনা চিনতে পারছে না। একটা অনিশ্চয়তা থাকে।

তার মানে সে তার কনশাসনেস-কে চিনতে পারছে না? কখনও বাস্তবতা তার সামনে এভাবে আসে যে, কাজটির ফল কী হবে সুনিশ্চিতভাবে বুঝতে না পেরেই তাকে কাজটি করে ফেলতে হয়। সে বলে, ‘অন্য উপায় খুঁজে পাইতেছিলাম না, এইটা ঠিক হবে কিনা নিশ্চিত হওয়ার আগেই করে ফেলতে হয়েছে।’ অথবা কাজটির রেজাল্ট দেখে বলে, ‘যা পাবো মনে করে কাজটা করছিলাম, এখন দেখি অপটিমাম সেটা আসে নাই।’ কখনও সে সন্দেহ নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ অভূতপূর্ব খুব দরকারি কিছু পেয়ে যায়, সাডেনলি পপ আপ হয় তার সামনে কিছু। এভাবেই আইনস্টাইনের সামনে এসেছিল ই = এমসি স্কয়ার বা যাহা বস্তু তাহাই শক্তি সূত্রটি। কিন্তু এই ধরনের জানার মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে, তার নিজেকে যথাযথভাবে জানার কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে না। তার সামগ্রিক চেতনাকে চেনাতে পারছে না। পারছে না বলেই সে কনফিউজড থাকবার পরিপ্রেক্ষিত সামনে আসছে।
আধুনিক কগ্নিটিভ সায়েন্সে যেনবা ‘নো দাইসেলফ’-এর কাছাকাছি কিছু বলছে। বলছে, যদি মানুষটি দেখে, তার ব্রেন তাকে অবিরত বোকা বানাচ্ছে, তাইলে বুঝতে হবে সে বাস্তবতা বুঝবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মজার ব্যাপার না? বোকা হতে হতে সে রিয়েলিটি চিনবার দিকে যাচ্ছে।

দুই.
এই দুনিয়াতে আমি মানুষটি বোকা থাকি বা বুদ্ধিমান থাকি, আমি একটা সময়ে মানুষ আকার ধরে জন্মেছি, আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমার এই সুশৃংখল শরীরকে দেখতে পাওয়া যাবে না। যখন মারা যাবো, আমার শরীর, যেটিকে আমি যত্ন করেছি খুব, এই শরীর মৃত হওয়ায় ধীরে ধীরে শক্তপোক্ত বাঁধন ঢিলে হতে হতে ডিকম্পোজ হতে থাকবে পৃথিবীর স্বাভাবিক আবহাওয়া মণ্ডলে।
একটা নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাকটেরিয়া নামের এক ধরনের প্রাণের জন্ম হবে। এর মানে শরীরে পচন ধরেছে। এই পচন পরিবেশ দূষণ করবে বলে এই শরীরটাকে কবর দেয়া হবে ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী। মৃত্যুকে ধর্মের মাধ্যমে বুঝেছি- ইনতেকাল হওয়া, মানে ইহকাল থেকে পরকালে স্থানান্তর হব। মানে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি না। এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে যাচ্ছি।

আচ্ছা, এবার দেখি বায়োলজিক্যাল পরিপ্রেক্ষণ আমাদের কী জানালো? শরীরের কণা লেবেলে কী ঘটে মরার পর?
পদার্থবিদ দেখছেন- আমাদের শরীরের ইলেক্ট্রিক্যাল (ইমপালসেস, সিগনালস) ও কেমিক্যাল (রিএকশনস) এনার্জি, যেসব এনার্জি দ্বারা জীব রূপ গঠিত, এই এনার্জি মরে না, এই জীব রূপ মরার পর শরীরের এই শক্তিগুলো রিডিস্ট্রিবিউট হতে থাকে, ছড়িয়ে পড়ছে মহাবিশ্বব্যবস্থায়, দেশ-কালে, যতক্ষণ না এই স্পেইস-টাইমের ইতি হয়। ‘ল অব কনজার্ভেশন অব এনার্জি’ এটা বুঝিয়ে দিচ্ছে আমাদেরকে। আমাদের শরীরের ইলেক্ট্রিক এনার্জি জেনারেশনের দ্বারা ২০ ওয়াটের একটি বাল্ব জ্বালানো যায়। আর আইনস্টাইন তো বের করে দিয়েছেন থিওরি অব রিলেটিভিটি। এটির হিসাব হল, বস্তু আর শক্তি একই জিনিসের দুই অবস্থা।
খাবারের মাধ্যমে আমরা পাই ক্যামিক্যাল এনার্জি, এই এ্যানার্জি শরীরে বদল হয়ে হয় কিনেটিক এনার্জি, যেটির দ্বারা পেশিতে শক্তি আসে। এখন, মৃত্যুর পর মানুষটির অণুগুলো শক্তিগুলো ধ্বংস হচ্ছে না। হচ্ছে না কারণ, শক্তির সৃষ্টি ও ধ্বংস নাই। এটা আমরা পেলাম ‘ফার্স্ট ল অব থার্মোডাইনামিক্স’ থেকে। মানে দেখা যাচ্ছে, শক্তি নানা রূপে অদলবদল হয়ে প্রবহমান। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে একজন ‘উইপিং ফিলোসফার’ বলেছিলেন- ‘দি অনলে থিঙ দ্যাট ইজ কন্সট্যন্ট ইন লাইফ ইজ চেইঞ্জ।’ (তিনি কে? স্বশিক্ষিত একটা মানুষ ছিলেন সক্রেটিসের আগে। নাম হেরাক্লিটাস। বর্তমান তুরস্কের ইজমির প্রদেশে, ইফেসস নামে যে শহর ছিল, সেখানের মানুষ ছিলেন হেরাক্লিটাস। খৃষ্টপূর্ব ৫৩৫ সালে তিনি এ দুনিয়াতে আসেন। হেরাক্লিটাসের আমলে ইফেসস পারস্য সাম্রাজ্যের অধীন ছিল।) আমাদের শরীর, ইউনিভার্সের ভিতরে ইউনিভার্স, এখানে নিত্য কোষের জন্ম-মৃত্যু হয়ে চলছে তবু শক্তি অমর থাকছে।

কিন্তু এই শরীরের সকল শক্তির মৌল চেতনা, যেটি ‘মেট্রিক্স অব অল ম্যাটার’, এই চেতনা, যে-চেতনাকে একটা ইন্টেলিজেন্ট মাইন্ড নিয়ন্ত্রণ করছে বলে মনে করতেন বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাংক। সেই চেতনাকে, সেই রুহকে, সেই স্পিরিট-কে, সেই আত্মাকে কতটুকু বুঝতে পেরেছে মানুষ? এই আত্মরূপকে জানার কোনো উপায় কি মানুষের কাছে আছে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়