শিরোনাম
◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫

প্রকাশিত : ০২ মার্চ, ২০১৯, ০২:৪০ রাত
আপডেট : ০২ মার্চ, ২০১৯, ০২:৪০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পৃথিবীর মানচিত্রে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির থাকা কি খুব প্রয়োজন?

অসীম সাহা : ভারত-পাকিস্তান বলতে গেলে যুদ্ধের মুখোমুখি। ক্ষুদ্র ও অঘোষিত যুদ্ধ তো চলছেই। এখন বাকি আছে ঘোষিত যুদ্ধ। পাকিস্তান কখনো ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, ইতিহাসে এমনটি খুব একটা দেখা যায় না। এ-নিয়ে সংবাদপত্রে-সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ বাকযুদ্ধ চলছে। বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রকাশ করছেন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, উত্তেজনা থাকলেও শেষপর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে যাবে না। কারণ উভয় দেশের হাতে রয়েছে পারমাণবিক বোমা। যুদ্ধ লাগলে যদি একে অপরের ওপর ঐ বোমা নিক্ষেপ করে, তাতে শুধু দুটি দেশ নয়, উপমহাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই তার প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়বে এবং তার পরিণাম হবে ভয়াবহ!

অনেকে বলেছেন, ভারত কখনো পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জেতেনি, শুধু ’৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ছাড়া। কারণ তখন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধজয়ে ভারতকে সহযোগিতা করেছিলো। তারা একেবারে মিথ্যে বলেননি। পাকিস্তান যতোবার ঘোষিত এবং অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, প্রায় প্রতিবারই তারা লাভবান হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারত।

কারণ, ভারত যুদ্ধে হারার ক্ষেত্রে প্রতিবারই অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিলো। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত প্রথম বড় ধরনের যুদ্ধের মুখোমুখি হয় চীনের সঙ্গে ১৯৬২ সালে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল নেহেরু, যিনি প-িত নেহেরু হিশেবে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাদৃত ছিলেন। চীনের সঙ্গে ছিলো ভারতের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই যুদ্ধের কথা নেহেরু ভুলেও কল্পনা করেননি। চীন-সীমান্ত যেমন বলতে গেলে অরক্ষিত ছিলো, তেমনি সামরিক শক্তিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেহরুর ছিলো প্রচ- অনীহা। তিনি বরং সামরিক শক্তির দিক দিয়ে ভারতকে শক্তিশালী করার চেয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে মজবুত করার দিকেই বেশি নজর দিয়েছিলেন। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন উদার এবং আন্তরিক মনোভাবাপন্ন। অস্ত্র নয়, সুষম রাষ্ট্রিক সম্পর্ক ছিলো তাঁর বিদেশনীতির ভিত্তি। তাই চৌএনলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁকে বিশ্বসভায় পরিচিত করে দেয়ার ব্যাপারে নেহেরুর ছিলো আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সে-কারণে চীন কখনো অকৃতজ্ঞের ভূমিকা পালন করবে, এটা তিনি ভ্রƒণাক্ষরেও ভাবেননি। চীনের প্রতি ছিলো তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সেই চীন যে হঠাৎ করে ভারতকে আক্রমণ করে বসতে পারে, তা ছিলো ভারতের কল্পনার অতীত। কিন্তু ১৯৬২ সালে বৌদ্ধ-অধ্যুষিত তিব্বত নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলে চীন তিব্বত এবং ভারত-ভুটান সীমান্তের ডোকলাম দখল করে, এমনকি আরো ভেতরে অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাইকে চীনের অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলে দাবি করে দখল করে নেয়। পরে ভারত পাল্টা আঘাত হানলে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য ভারতকে সমর্থন জানালে চীন পিছু হটলেও এবং অরুণাচল প্রদেশ ভারতকে ফেরত দিলেও আকসাইকে নিজেদের এলাকার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। সেই থেকে ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্তসংঘাত লেগেই আছে। সামরিক শক্তির দুর্বলতায় ভারতের এই পরাজয় নেহেরু এবং ভারতকে নতুন করে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠার প্ররোচনা জোগায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের গভীর সখ্য গড়ে ওঠে এবং ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশ থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করে নিজেদের সামরিক শক্তিকে জোরদার করে। রাষ্ট্র হিশেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে ওঠে তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র। অন্যদিকে চীন ভারতের চিরকালীন শত্রুতে পরিণত হলেও সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের প্ররোচনায় ভারতকে সমর্থন না জানিয়ে সহযোগিতা থেকে বিরত থাকে। তাতে চীনের জয়লাভের পথ সহজ হয়। চীন ও পাকিস্তানের দ্বিমুখী চাপে ভারত নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে।

আর ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার পর থেকেই পাকিস্তান ভারতের চিরকালীন বৈরী দেশে পরিণত হয়। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী পাকিস্তান চীনের সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্র হিশেবে পাশে পেয়ে বারবার ভারতীয় সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টিতে আক্রমণ শানাতে থাকে। পাকিস্তান ধীরে ধীরে হয়ে হয়ে ওঠে একটি জঙ্গিরাষ্ট্র, হয়ে ওঠে সারা পৃথিবীর জঙ্গিদের অভয়ারণ্য। তারা বছরের পর বছর ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।

১৯৪৭ সালে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দুবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৯৬৫ সালে ফের কাশ্মীর নিয়ে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লাহোরে আক্রমণ করে তাদের সামরিক শক্তির জানান দেয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানকে লজ্জাজনক পরাজয়ে বাধ্য করে। ১৯৮৪ সালে সিয়াচেনযুদ্ধে ভারত পাকিস্তানের রক্ষাব্যুহ তছনছ করে দেয়। ১৯৯৯ সালে কার্গিলযুদ্ধে ভারত পাকিস্তানকে চরম শিক্ষা দেয়। প্রথাগত যুদ্ধে পেরে না উঠে পাকিস্তান জঙ্গিগোষ্ঠীর সহযোগিতা নিয়ে ভারতকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে পাকিস্তানি জঙ্গিরা ভারতের পার্লামেন্টে রক্তক্ষয়ী আক্রমণ চালায়। ২০১৫ সালে তারা মুম্বাইতে জঙ্গি আক্রমণ চালায়। ফলে ২০১৬ সালে ভারত পাকিস্তানের ওপর সামরিক আক্রমণ চালায়। কিন্তু ২০১৭-তে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী ভারতের ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে হামলা চালিয়ে অসংখ্য যাত্রীকে হত্যা করে। ভারতের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীর ক্রমাগত তৎপরতায় অতিষ্ঠ ভারতীয় বিমানবাহিনী এবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পুলওয়ামায় বিমানহামলা চালায়। পাকিস্তানের ওপর এটি ভারতের সর্বশেষ সামরিক হামলা। এ-নিয়ে দুদেশ এখন যুদ্ধের মুখোমুখি! যদিও পাকিস্তান আটক ভারতীয় বৈমানিককে ফেরত দানের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে সহজ করা চেষ্টা করছে; কিন্তু পাকিস্তানকে বিশ্বাস করলে ভারত আবার বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। কারণ পাকিস্তান এমন এক রাষ্ট্র, যারা সামনে থেকে ছুরি মারায় অভ্যস্ত নয়, তারা সব সময় পেছন থেকে ছুরি মেরে জয়লাভের চেষ্টা করে। এটা যেমন ভারতের বেলায় সত্যি, তেমনি আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বেলায়ও সত্যি।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠী ভোটের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দিলেও সংখ্যালঘিষ্ঠ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতা পাবার পর থেকেই বাঙালিদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা শুরু করলে ১৯৪৮ সাল থেকেই তার বিরুদ্ধে বাঙালি মুসলিমরা প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। ফলে পশ্চিম-পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেই যে ষড়যন্ত্র শুরু করে, ১৯৭১ সালের মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সরকারের সহযোগিতায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করার পূর্ব-পর্যন্ত পাকিস্তানিদের সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে! এ-ধরনের ষড়যন্ত্র তারা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও করেছে। লাদেনবাহিনীকে নিজেদের ঘাটি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। তা ছাড়াও প্রায় সকল জঙ্গির সূতিকাগার ও লালনপালনক্ষেত্র পাকিস্তানের ঘাটি। এখান থেকেই পৃথিবীর বহুদেশে জঙ্গি সাপ্লাই দেয়া হয়। সে-কারণেই আমেরিকার পিরিতিতে তাদের জন্যে এখন একটু ভাটার টান। এখন শুধু সম্বন্ধি হিশেবে টিকে আছে চীন, যে চীন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি পাকিস্তানের শুধু সমর্থক নয়, শিখন্ডি হিশেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধেও নির্লজ্জভাবে কাজ করেছে। পাকিস্তান এখনো তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কূট ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এখানকার পাকিস্তান দূতাবাসও বাংলাদেশ-বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের ঘাটি। এ-অবস্থায় যে সব বাংলাদেশি ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা যে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের শত্রু, সেটা ‘বাংলাভাষী পাকি’দের দেখলেই বোঝা যায়।

প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীকে যদি শান্তির আবাসভূমি হিশেবে গড়ে তুলতে হয়, তা হলে পাকিস্তান নামক একটি বিষবৃক্ষকে পৃথিবীর মাটি ও মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত করে ফেলা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে শুধু দক্ষিণপূর্ব এশিয়া নয়, এমনকি পৃথিবীর অস্তিত্বও বিঘিœত হতে পারে। আমেরিকা ও চীনসহ পথিবীর শক্তিধর দেশগুলো যদি এটা না বোঝে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান যে আর একটি বিশ্বদস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে ধ্বংস করে নিজেদের উগ্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তা ছাড়া শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সমস্ত শান্তিকামী মানুষকে এ-ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে এবং পরমাণুশক্তিধর দেশগুলোকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালিয়ে জঙ্গিবাদ রপ্তানির সব পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। এ-ছাড়া পৃথিবীতে শান্তি ফেরানোর আর কোনো পথ খোলা আছে বলে আমি মনে করি না!

লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়