জুয়েল খান : মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে বর্ডারে পৌঁছানো, শরণার্থী শিবিরে তাদের অমানবিক জীবন যাপন, এসব বিষয়ে তেমন কোনো লেখালেখি নেই। বর্তমান প্রজন্মকে সেই সময়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিতেই ‘শরণার্থী’ উপন্যাসটি লিখি। বইটি পড়লে সে সময়ে শরণার্থীদের সীমাহীন কষ্টের কথা জানতে পারবে বর্তমান প্রজন্ম। এমনটাই জানালেন লেখক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব সুধাংশু শেখর বিশ্বাস।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, তাদের ঘড়বাড়ি পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেছে, লুট হয়ে গেছে সহায়-সম্পদ, মেরে ফেলেছে আপনজনদের। সর্বশান্ত হয়ে পথে নেমেছে তারা। খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই। মাথার উপর প্রচন্ড রোদ। জীবন বাঁচানোর তাগিদে অপর্যাপ্ত খাবার আর খাল, বিল, ডোবার পানি পান করতে হয়েছে। ফলে কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ে মহামারি আকারে। চলতি পথে বিনা চিকিৎসায় রাস্তায়ই ধুঁকে ধুঁকে মারা যায় আনুমানিক চার লক্ষ অসহায় মানুষ। রাস্তা-ঘাটে, মাঠে শুধু লাশ আর লাশ। লাশের স্তুপ পায়ে মারিয়ে তারা একসময় ভারতে পৌঁছায়। আশ্রয় নেয় শরণার্থী শিবিরে। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপর্যাপ্ত রেশন। শরণার্থীদের জীবনের অবর্ণনীয় সেই দুঃখ-কষ্টের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে ‘শরণার্থী’ উপন্যাসে।
লেখক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার মেগচামী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের উর্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেছেন।
তিনি মূলত গবেষণাধর্মী উপন্যাস লেখেন। বাংলাদেশের নমশূদ্র সম্প্রদায়ের জীবনধারার উপর তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নমসপুত্র’। উপন্যাসটি ব্যাপকভাবে পাঠকপ্রিয় হয়। তার উল্লেখযোগ্য অন্য গ্রন্থগুলো হলো- দ্রোহের দীপাবলি, বিলের জীবন, নমশূদ্রদের বারো মাসের তেরো পার্বণ, ম্যাকেলিনা, হোটেল সিয়াম, স্ট্যাটাস, সুরুজ দ্য গ্রেট, সাগিনো ভ্যালি, সোনালি ডানার চিল ইত্যাদি। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩।
২০১৯ সালের বইমেলায় তাঁর ২টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাস ‘নমস উপাখ্যান’ পাওয়া যাচ্ছে ‘নালন্দা’ স্টলে (প্যাভিলিয়ন-১০) এবং ভ্রমণ উপন্যাস ‘হোয়াইট চ্যাপেল’ পাওয়া যাচ্ছে ‘আগামী প্রকাশনী’ স্টলে (প্যাভিলিয়ন-২১)
আপনার মতামত লিখুন :